প্রত্যাশামতোই বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্র জিতল তৃণমূল। বাঁকুড়ায় প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্রের স্ত্রী মিনতি মিশ্র ১৪ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। দাসপুরে প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভুঁইয়ার স্ত্রী মমতা ভুঁইয়া জিতেছেন প্রায় ১৯ হাজার ভোটে। এর ফলে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা আবার ১৮৫ হয়ে গেল। দুই কেন্দ্রেই তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় কমেছে।
তবে উপ নির্বাচনে কম ভোট পড়া, প্রচণ্ড গরম মিলিয়ে ভোটের হার কমে যাওয়ায় ব্যবধান কমার জন্য মোটেই ‘উদ্বিগ্ন’ নয় শাসকদল।
বিজেপি-র দুই কেন্দ্রেই জামানত জব্দ হয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাদের ভোটের হার ও পরিমাণ দুই’ই বেড়েছে। বাঁকুড়া এবং দাসপুরে গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় বিজেপি-র দু’হাজারেরও বেশি করে ভোট বেড়েছে। তাদের ভোট বৃদ্ধির হার বাঁকুড়ায় ২.০৫ শতাংশ এবং দাসপুরে ১.৩৫ শতাংশ। এর ফলে ‘উৎসাহিত’ দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “মানুষের আস্থা তৃণমূলের প্রতি কমছে এবং সিপিএমের প্রতি ফিরছে না। এই অবস্থায় আমাদের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ এ রাজ্যে একমাত্র আমরাই পরীক্ষিত নই।” |
সিপিএমের ভোট বাঁকুড়ায় বাড়লেও দাসপুরে কমেছে। বাঁকুড়ায় গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে কিছুটা হলেও ভোট বৃদ্ধি পাওয়াকে সিপিএম ‘ইতিবাচক’ লক্ষ্মণ হিসেবে দেখছে। দাসপুরে ভোট-হ্রাসকে অবশ্য সিপিএম তেমন ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছে না। কারণ সেখানে তৃণমূলেরও ভোট কমেছে। গত মঙ্গলবার বাঁকুড়া এবং দাসপুরে উপ নির্বাচন হয়। গত বছর বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়ায় ৮০.০৬ শতাংশ ভোট পড়লেও এ বার ভোটের হার ছিল ৬৭.৩৫ শতাংশ। দাসপুরে ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ বার সেখানে প্রদত্ত ভোটের হার ৭৪ শতাংশ। বাঁকুড়ায় তৃণমূল প্রার্থী মিনতিদেবী পেয়েছেন ৪৯ শতাংশের বেশি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের নীলাঞ্জন দাশগুপ্তের প্রাপ্ত ভোট ৪০.০৩ শতাংশ। গত বছর তৃণমূল এখানে প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
জয়ের পর মিনতিদেবী বলেন, “স্বামীর অপূর্ণ কাজ শেষ করা আমার লক্ষ্য।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র কথায়, “এক বছরের কাজ দেখেই মানুষ আমাদের আরও কাজ করার দায়িত্ব দিলেন।” তবে বাঁকুড়াবাসীর একাংশের মতে, ভোট হয়েছে প্রয়াত বিধায়ক কাশীবাবুর নাম নিয়েই। তিনি না থাকলেও নির্বাচনে তাঁর ‘উপস্থিতি’ টের পেয়েছিলেন বাসিন্দারা। তাঁর সহধর্মিনী মিনতিদেবী ‘সহানুভূতির ভোট’ পেয়েছেন। বাঁকুড়ায় সিপিএমের ৩ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “এক বছরেই তৃণমূলের ভোট কমেছে। আমাদের ভোট বেড়েছে। সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে মানুষ আমাদের পাশে আসছেন।”
দাসপুরে গোড়া থেকেই তৃণমূল গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জেরবার ছিল। মমতাদেবী ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তিত্ব হওয়ায় দলের একাংশ তাঁকে মেনে নিতে পারেননি। শেষমেশ অবশ্য ঘর গুছিয়ে নেয় তৃণমূল। মমতাদেবী পান ৫২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের সমর মুখোপাধ্যায়ের পেয়েছেন প্রায় ৪২% ভোট। তৃণমূল ও সিপিএম দু’দলেরই ভোটের হার কমেছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আরও বেশি ব্যবধানে জিততাম। কিন্তু ভোটই কম পড়েছে। আমাদের বহু সমর্থক কাজের জন্য বাইরে। তবু আমাদের প্রার্থীকে জেতানোয় দাসপুরের মানুষকে অভিনন্দন।” মমতাদেবী বলেন, “এই জয় স্বামীকেই উৎসর্গ করছি।”
|