প্রিয়তম কোচ কে? তিনি নাম করলেন বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি কোচ রাইনাস মিশেলসের। তাঁর কোচিংয়েই ২৪ বছর আগে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেদারল্যান্ডস।
প্রিয়তম ফুটবলার কে? তিনি নাম করলেন মার্কো ফান বাস্তেনের। তাঁর সঙ্গে খেলেই ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সে বার। সেটাই ডাচদের শেষ আন্তর্জাতিক সাফল্য।
সেই ইউরো কাপ চলছে এখন। ডাচরা ঘোর সঙ্কটে। তার মধ্যেই ভারতীয় ফুটবলের জাতীয় কোচের পদে চূড়ান্ত হয়ে গেলেন উইম কোভারম্যান্স। যাঁর পুরনো ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন রবেন, ফান পার্সি, স্নাইডার, স্টেকেলেনবার্গরা। ডাচ টিমে গণ্ডগোলের কথা শোনা যাচ্ছে বারবার। কোভারম্যান্স কিন্তু তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কোনও ঝামেলায় যেতে চান না। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য ক্লাবের সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতে যেতে চান না। তিনি ভারতের ক্লাব কোচেদের সঙ্গে নিয়েই ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। চান ৪-৩-৩ এর মতো এক ছকে খেলতে। যা ডাচ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রব বানের মস্তিষ্কপ্রসূত। |
ইউরোকাপজয়ী কোভারম্যান্স। ভারতের কোচ হিসাবে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে। ছবি: প্রেম সিংহ |
নতুন কোচের মন্তব্য, “গোটা বিশ্বে ক্লাবেরাই খেলোয়াড় তৈরি করে। জাতীয় দল নয়। তাই ক্লাবের কোচেদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ করে এগোতে চাই আমি। সেই জন্য আমি গোটা ভারত ঘুরে ঘুরে ক্লাব গুলোর খেলা দেখব। আর ক্লাব কোচেদের সঙ্গে পরামর্শ করে চেষ্টা করব ক্লাব ও জাতীয় দলে একই ধরনের খেলার।” ইউরোয় ডাচদের নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রাক্তন ইউরো জয়ী স্টপার কিছু বলতে চাননি। “এখন আমি নেদারল্যান্ডসের কেউ নই। ভারতের।”
কোনও ঔদ্ধত্য নেই এই ডাচ কোচের কথায়। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করাই লক্ষ্য। তাই জাতীয় দলের কোচিং স্টাফেও আপাতত কোনও পরিবর্তন আনতে চান না কোভারম্যান্স। এমনকী যাঁর জায়গায় তিনি কোচ হলেন, সেই স্যাভিও মিদেইরাকে খারিজ না করে কোচিং স্টাফে রাখছেন। যদি স্যাভিও থাকতে রাজি হন, তিনি সহকারী হিসেবে থেকে যেতেও পারেন।
জুনের শেষ দিকে জুনিয়র এশিয়ান কাপে ভারতকে দেখতে যাচ্ছেন কোভারম্যান্স। জুলাইয়ের প্রথম দিন দায়িত্ব নিচ্ছেন। প্রথম পরীক্ষা অগস্টের নেহরু কাপে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বর্তমানে যে স্টাইলে ফুটবলটা খেলছে, সেই পাসিং ও পজেশনাল ফুটবলই ভারতীয় ফুটবলে চালু করতে চান তিনি। বললেন “সরাসরি এটা সিনিয়র টিমে না আনতে পারলেও প্রথমে আমি এই ফুটবলটা ফেডারেশনের অ্যাকাডেমিগুলোতে চালু করতে চাই। এবং তার পর আস্তে আস্তে সেটা জাতীয় দলের খেলাতেও আনতে চাই।” ভারতীয় দল ও এখানকার পরিকাঠামো নিয়ে কোনও রকম ধারণা নেই এই ডাচ কোচের। তাঁর কথায়, “এশিয়ান কাপ ও সাফ কাপের ভিডিও দেখে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সমন্ধে যতটুকু জানার জেনেছি। তার থেকে বেশি কিছু জানি না। তবে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে বেশি না জানলেও আমার নিজের উপর বিশ্বাস রয়েছে।”
আজ ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভায় প্রেজেন্টেশন পেশ করেন কোভারম্যান্স। তাঁকে প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল প্রশ্ন করেন, রুদ খুলিতকে নিয়ে। পরে তাঁর কথাবার্তায় বোঝা গেল, প্রিয় ফুটবলার খুলিত নন, বাস্তেন। কোভারম্যান্সকে আপাতত দু’বছরের জন্য নিযুক্ত করা হয়। ভারতে আসার আগে তিনি ছিলেন আয়ার্ল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২১ কোচ, ছিলেন হাই পারফরম্যান্স ডিরেক্টর। ২০০২ থেকে ২০০৮ সালে নেদারল্যান্ডসের জুনিয়র দল নিয়ে কাজ করেছেন। ওই সময়ই ফান পার্সি, স্নাইডার, রবেনদের ট্রেনিং দিয়েছেন। কারা খেলেছিলেন কোভারম্যান্সের সঙ্গে ওই ইউরোয়? নামগুলো চিরস্মরণীয়। খুলিট, বাস্তেন, রাইকার্ড, রোনাল্ড কোম্যান, আরউইন কোম্যান, হান্স ফান ব্রুকলিন, অ্যারন উইন্টার, জান উটার্স, উইম কিয়েফ্ট, মিশেলেন, তিগেলেন। কোভারম্যান্স যে একটার বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, তাতে আশ্চর্য হওয়ার নেই। নতুন তথ্য হল, এই প্রথম এক ইউরো চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার ভারতের কোচ হয়ে এলেন। তিনি নতুন কী করেন, সেটাই দেখার। |