নর্দমা উপছে বাড়িতে দূষিত জল ঢুকে যাওয়া নিয়ে মেয়রের কাছে বৃহস্পতিবার সকালে ‘নালিশ’ জানিয়েছিলেন চন্দননগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, কাঠমিস্ত্রি তপন দাস। সেই ‘অপরাধে’ তপনবাবু ও তাঁর এমএ পড়ুয়া ছেলে সমীরকে রাতে দলবল নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মোহিত নন্দীর বিরুদ্ধে। প্রহৃত সমীরকে অচৈতন্য অবস্থায় চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফেরেনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন মোহিতবাবু। এসডিপিও (চন্দননগর) তথাগত বসু বলেন, “দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁটাপুকুর এলাকায় বাড়ি তপনবাবুর। বাড়িটি পাড়ার শেষ প্রান্তে। গত কয়েক দিন ধরে নর্দমার দূষিত জল ওই প্রান্তে গিয়ে জমে যাচ্ছে। নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার না হওয়ায় সেটি প্রায় বুজে গিয়ে দূষিত জল ঢুকে পড়ছে তপনবাবুর বাড়িতে। দাস পরিবারের অভিযোগ, বার বার মোহিতবাবুকে বলা সত্ত্বেও নর্দমা পরিষ্কার করা হয়নি। উপায়ান্তর না দেখে তাঁরা বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়র রাম চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হন। অভিযোগ, সে কথা জানতে পেরে মোহিতবাবু রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সদলবলে ওই বাড়িতে চড়াও হন। তপনবাবুকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
তপনবাবু বলেন, “আমাকে বাঁশপেটা করতে থাকেন মোহিতবাবু এবং তাঁর লোকেরা। ছেলে সমীর ছুটে এলে আমাকে ছেড়ে ওরা ওকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। ছেলে অজ্ঞান হয়ে যায়। বাড়ির মেয়েদের শ্লীলতাহানিও করে ওরা।” |
খবর পেয়ে পুলিশ আসার আগেই হামলাকারীরা পিঠটান দেয়। তপনবাবু এবং সমীরকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তপনবাবুকে। তবে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি সমীরের। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সমীরের স্যালাইন চলছে। তপনবাবু মোহিতবাবু-সহ চার জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর স্ত্রী শীলাদেবী বলেন, “আমরা মেয়রের কাছে সমস্যার কথা জানানোয় কাউন্সিলর খেপে গিয়ে এ ভাবে হামলা চালালেন। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। ওই কাউন্সিলর বারবার হুমকি দিচ্ছেন। পুর-পরিষেবা চেয়ে কি অন্যায় করলাম?”
মোহিতবাবু ১ নম্বর বরো চেয়ারম্যানও। তিনি অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তপনবাবুদের মারধরের দায় তিনি চাপিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর। তাঁর দাবি, “তপনবাবুদের বাড়িতে নর্দমার জল ঢোকার বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার সচিব প্রসেনজিৎ রায়কে পাঠিয়েছিলাম। তাঁর উপরে ওই পরিবারের লোকজন হামলা চালায়।” সেই কারণেই রাতে তিনি তপনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে যান জানিয়ে মোহিতবাবু বলেন, “তপনবাবুরা আমাকেও মারধর করে। আমার ডান চোখে আঘাত লাগে। হাতেও চোট লাগে। আমাকে মারতে দেখে বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে তপনবাবুদের মারধর করে। আমাদের লোকজন কেউ ওদের মারেনি।” চোখে ‘গুরুতর চোট’ লাগার কথা বললেও মোহিতবাবু অবশ্য হাসপাতালে যাননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাসিন্দারা তপনবাবু ও তাঁর ছেলের উপরে ‘হামলা’র ঘটনায় কাউন্সিলর ও তাঁর দলবলই জড়িত বলে জানিয়েছেন। কাউন্সিলরের ‘ভূমিকা’র নিন্দাও করেছেন তাঁরা। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, “তপনবাবুরা আমার কাছে এসেছিলেন। ওঁদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলাম। তবে মারধরের কথা জানি না। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা গর্হিত অপরাধ। অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “অভিযোগ সত্যি হলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” |