‘১৩’-য় সবই শুভ, সন্ধিক্ষণে ব্যাখ্যা প্রণবের
তালকাটোরা রোডের ‘লাকি’ ১৩ নম্বর-এর লনে অন্যান্য দিন ঢুকতে হলে পার হতে হয় নিরাপত্তার বিবিধ বলয়। আজ সন্ধ্যায় সেখানে লাড্ডু আর গোলাপজামুনের বন্যা বইছে! যেখানে অবারিত দ্বার সাংবাদিক-সহ পথচলতি কৌতূহলীরও!
বাড়িটি বরাবরই প্রিয় এবং পয়া বলেই ঘনিষ্ঠ মহলে বলে থাকেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। হয়তো আর বেশি দিন এই বাড়িতে থাকাও হবে না। কিন্তু আজ সেখানে শুধুই উৎসব। উৎফুল্ল স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ঘরে ডেকে নিচ্ছেন সবাইকে। এই ঘরে এত ফ্ল্যাশের ঝলক আগে কবে দেখা গিয়েছে? একদা ইন্দিরা গাঁধীর প্রিয়পাত্রী শুভ্রাদেবী শুধুই হাসছেন। বললেন, “আমি খুবই খুশি। তবে আগে উনি নির্বাচিত হোন, তার পরে শান্তি।” বান্ধবী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও মনে পড়ছে তাঁর। বললেন, “এখনও ফোন আসেনি। কিন্তু নিশ্চয়ই এই খবরে
উচ্ছ্বসিত প্রণব-জায়া।
—নিজস্ব চিত্র
খুবই খুশি হয়েছে ও। হাসিনা আমাদের পারিবারিক বন্ধু।”
নর্থ ব্লকেও কার্যত মিলনমেলা। প্রণববাবু ৭ রেসকোর্স থেকে ফিরে অর্থ মন্ত্রকে ঢোকার মুখেই ভিড়বন্দি। জানালেন, “পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে দলের সতীর্থ এবং অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি। তাঁদের কাছে আমি ঋণী। কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছেও আমি ঋণী, রাষ্ট্রপতি পদে আমাকে প্রার্থী করার জন্য।” ‘জয়ের’ দিনে তৃণমূল নেত্রীর বিরোধিতাকেও ভুলে যেতে চাইছেন প্রণববাবু। তাঁর কথায়, “অন্যান্য দলের পাশাপাশি তৃণমূলকেও আবেদন করব ইউপিএ-র সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার গুরুত্বপূর্ণ সতীর্থ। জনপ্রিয় নেত্রী। উনি আমার বোনের মতো। তাঁকে আমি স্নেহ করি।”
মালা হাতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। কিছু দিন আগেই কলকাতায় প্রণববাবুকে সমর্থনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পাশে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব প্রদ্যোৎ গুহ, যিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন মমতার সঙ্গে প্রণববাবুর সেতু রচনা করতে। পারেননি, কিন্তু তাতে আর আক্ষেপ নেই। মালা পরিয়ে দেওয়া হল প্রণববাবুকে। অর্থমন্ত্রীর ঘরেও ভিড় আর ফুলের ছয়লাপ। মধুমেহ রোগের শিকার হলেও মিষ্টি ভীষণ প্রিয় প্রণববাবুর। তাই ‘কম চিনি’র মিষ্টিও বিতরণ হচ্ছে অকাতরে। প্রণববাবু বললেন, “এর আগে ৭৭ এবং ৮৪ এই দু’বার অর্থমন্ত্রীর এই ঘর থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল আমাকে। এই নিয়ে তৃতীয় বার যেতে হতে পারে!” সে ক্ষেত্রে ‘চলে যাওয়ার’ আগে অর্থমন্ত্রীকে শেষ করতে হবে হাতের জমে থাকা কাজ। বরাবরের মতো আজও ‘আবেগহীন’ প্রণববাবু দ্রুত ‘কাজে’ বসে পড়লেন শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে। তারই ফাঁকে জানালেন, “রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে ভোট চাইবার জন্য সমস্ত রাজ্যে ঘুরতে হবে টানা কুড়ি-পঁচিশ দিন। এটা সৌজন্যের মধ্যেও পড়ে।”
খুশি কন্যা শর্মিষ্ঠাও। চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নন, রাষ্ট্রপতিই হোন প্রণববাবু। কেন? শর্মিষ্ঠা জানাচ্ছেন, “প্রধানমন্ত্রী হলে চাপ আরও বাড়ত। আশা করব এ বার একটু শরীরের দিকে নজর রাখতে পারবেন বাবা। দেশের জন্য তিনি সর্বদাই কাজ করে গিয়েছেন, এখনও করবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে কিছুটা শান্ত ভাবে জীবন তো কাটাতে পারবেন।” তবে এই আনন্দের মধ্যেও সামান্য বিষাদের সুর তাঁর গলায়। “মমতাদিকে ছোটবেলা থেকে চিনি। আমাদের পারিবারিক সম্পর্কও রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে এক জন বাঙালির মনোনয়নকে কেন তিনি আটকানোর চেষ্টা করলেন তা সত্যিই বুঝতে পারছি না।” পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ছেলে এবং বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাঙালি রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন।”
আর ‘তিনি’ নিজে? উচ্ছ্বাসে লাগাম দিয়েও সেই ‘পয়া’ ১৩ নম্বরের অনুষঙ্গ টেনে প্রণববাবু বললেন, “হিন্দু শাস্ত্রে ১৩ মানে পয়া, ১৩ মানে ত্রয়োদশী। তেরোতে যা করবেন, তা-ই শুভ।” কিন্তু রাষ্ট্রপতি হলে তো আর এখনকার মতো নিয়মিত সংসদের অলিন্দে দেখা যাবে না তাঁকে। প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর সটান উত্তর, “সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে তিনি সংসদে বক্তৃতা দিতে পারেন। সেটা তাঁর অগ্রাধিকার। সংসদের তিনটি অংশ রাষ্ট্রপতি, লোকসভা এবং রাজ্যসভা।”
তবে কি রাষ্ট্রপতি অবতারে শুধুই ‘সাংবিধানিক প্রধান’ হয়ে থাকতে চান না ইউপিএ সরকারের ‘চাণক্য’? রাজনীতি-জীবনের সম্ভবত সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা তুলে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.