|
|
|
|
আরও অপেক্ষাই কৌশল এখন বিজেপির |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
সনিয়া গাঁধী রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করলেও বিজেপি এখনও তাদের হাতের তাস দেখাতে চাইছে না। ইউপিএ-র শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত প্রার্থী এ পি জে আব্দুল কালাম এবং অ-কংগ্রেসি দলগুলির মনোভাবের উপরেই এখন নির্ভর করছে বিজেপি-র পরবর্তী কৌশল। যে কারণে প্রণববাবুর নাম ঘোষণার পরেই খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলিকে ফোন করলেও বিজেপি-র তরফে এখনই কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি।
লালকৃষ্ণ আডবাণী বরং এ কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা আগেই প্রণববাবুকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তখন আগ্রহ দেখায়নি কংগ্রেস। সমর্থন চাওয়ার পক্ষে কিছুটা দেরিই করে ফেলেছে তারা। যদিও প্রণববাবুকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কিন্তু খারিজও করছে না বিজেপি। তবে আগে তারা দেখতে চায় কালাম কী অবস্থান নেন। তিনি রাজি না হলে অরাজনৈতিক অন্য কারও কথাও ভাববে বিজেপি। এই সম্ভাবনার পথ খোলা রাখতেই এখনই প্রণববাবুকে সমর্থনের আশ্বাস দিচ্ছে না বিজেপি। আবার কালামের নামও ঘোষণা করছে না দলের বা এনডিএ-র প্রার্থী হিসাবে।
এর প্রথম কারণ অবশ্যই প্রণববাবুর নাম ঘোষণার পরেই দ্রুত বদলাতে থাকা রাজনৈতিক সমীকরণ। দ্বিতীয় কারণ কালাম সম্পর্কে এনডিএ-র ভিতরে ও জোটের ঘনিষ্ঠ দলগুলির মতপার্থক্য। এক শরিক জেডিইউ তো আজ জানিয়েই দিয়েছে, কালাম নয়, তাঁরা প্রণববাবুকেই সমর্থন করবে। আজ সকালে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাসভবনে এনডিএ-র বৈঠক যখন বসে তখনও ইউপিএ-র বৈঠক শুরু হয়নি। প্রণববাবুর নাম ঘোষণাও হয়নি। তার আগেই বিজেপি ঠিক করে রেখেছিল, কংগ্রেস নাম ঘোষণা করার আগে এনডিএ-র তরফে কোনও প্রার্থীর কথা ঘোষণা করা হবে না। কারণ তাতে অন্য অ-কংগ্রেসি দলগুলির পক্ষে তাঁকে সমর্থন করতে সামস্যা হতে পারে। বরং কালামকে অন্য কোনও পক্ষ প্রার্থী করলে তাঁকে সমর্থনের কৌশলই নেওয়া হয়েছিল। মুলায়ম যে শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করে কংগ্রেসের সঙ্গেই যাবেন, সেই আঁচ আগেই ছিল। তাই ইউপিএ-র শরিক মমতা ও সহযোগী মায়াবতীর উপরেই ভরসা করছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু ছবিটা বদলে যায় প্রণববাবুর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই। মুলায়মের সঙ্গে মায়াবতীও সমর্থন জানান প্রণববাবুকে। বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, সিংহভাগ দল যদি প্রণববাবুর পাশে দাঁড়ায়, তবে বিজেপি যাঁকেই সমর্থন করুক না কেন, তাঁকে জিতিয়ে আনা দুষ্কর হবে। |
|
এনডিএর বৈঠকে বিজেপি নেতারা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই |
নবীন পট্টনায়ক ও জয়ললিতাকে ভবিষ্যতে এনডিএ-তে দেখতে চায় বিজেপি। তাঁদের না চটিয়েও বিজেপি পূর্ণ সাংমাকে দৌড় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা শুরু করেছিল কালামের কথা ভেবে। কালামের পক্ষে অকংগ্রেসি দলগুলির সমর্থন জোটানোর তৎপরতাও শুরু করেছিল তলে-তলে। কিন্তু সমস্যা খোদ কালামকে নিয়েই। এক তো তাঁর সম্পর্কে একমত নয় এনডিএ-র দলগুলি। তার উপর, জেতার নিশ্চয়তা না থাকলে খোদ কালামই নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এনডিএর মধ্যেই এখন স্পষ্ট দু’টি মত। এক পক্ষের বক্তব্য, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রণববাবুকেই সমর্থন করা উচিত। তার বিনিময়ে বরং উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী নিয়ে দর কষাকষি করা লাভজনক হতে পারে। কারণ, গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিভা পাটিলের বিপক্ষে ভৈঁরো সিংহ শেখাওয়াত লড়তে চাওয়ায় বিজেপি-র মুখ পুড়েছিল। এ বারে তাই সংখ্যা অনুকূলে না থাকলে লড়াইয়ে না নামাই ভাল। তবে এ ক্ষেত্রেও বিরোধী জোটকে হাতছাড়া করতে চাইছে না বিজেপি। আডবাণী তাই আজ বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি-র কোনও দেওয়া-নেওয়া হবে না। কংগ্রেস যদি সম্মিলিত বিরোধী পক্ষের সাহায্য চায়, সে ক্ষেত্রে ইউপিএ-র প্রার্থীকে সর্বসম্মতিতে সমর্থন করার কথা ভাবা যেতে পারে।” কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় হয়ে গেলে কংগ্রেস আদৌ বিজেপি-র কাছে বা (আডবাণীর কথা মতো) বিরোধী পক্ষের কাছে সমর্থন চাইবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে বিজেপি।
দলের অন্য পক্ষের মতে, ভোটে জেতার সম্ভাবনা না থাকলেও কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলার লক্ষ্যেই চলা উচিত দলের। এ বারের নির্বাচনে এমনিতেই বিজেপি বা এনডিএ-র পক্ষে সংখ্যা ছিল না। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসে মুলায়ম-মমতা ‘জুটি’ সনিয়া গাঁধীর নাম খারিজ করে পাল্টা ৩টি নাম প্রস্তাব করায়। মুলায়মের ‘বিশ্বাসভঙ্গ’-এর পরেও কালাম প্রশ্নে অনড়ই রয়েছেন মমতা। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ভোটে যদি জিততে না-ও পারি, তবু আমাদের লক্ষ্য লোকসভা ভোটের আগে অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে একজোট করা। আর এই প্রেক্ষিতে মমতার মতো ইউপিএ-র এক শরিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ ঘটিয়ে যদি ভবিষ্যতে এনডিএ-র শ্রীবৃদ্ধি হয়, গোটা নির্বাচনে সেটাই আমাদের লাভ।” সুষমা স্বরাজের কথায়ও মিলেছে এর সমর্থন, “সব অ-কংগ্রেসি দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। সকলের সঙ্গে কথা বলেই আমাদের অবস্থান শীঘ্র স্পষ্ট করব।”
তবে সুষমা ‘শীঘ্র’ সিদ্ধান্তের কথা বললেও নানা রকম সম্ভাবনা নিয়ে দোলাচলের কারণেই বিজেপি নেতৃত্ব আরও কয়েকটি দিন সময় নিতে চাইছেন। প্রণববাবুর নাম ঘোষণার পর রাজনীতির জল কোন দিকে গড়ায়, মমতা কী ভূমিকা পালন করেন, এ সব দেখেই বিজেপি ফের এনডিএ-র বৈঠক ডাকবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। |
|
|
|
|
|