খেলা এখনও বাকি, নয়া হুঁশিয়ারি মমতার
দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিচারে তিনি আপাতত ‘একা’। কিন্তু তিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিজের রাজ্যে ফিরে এসে বললেন, “কেউ যদি মনে করে গেম ইজ ওভার, তা কিন্তু নয়!”
ঘটনাচক্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যে দিন মুলায়ম সিংহ যাদব তাঁর সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করলেন, সে দিনই দেশ জুড়ে বিধানসভা উপনির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, দাসপুরের সঙ্গেই মুলায়মের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মঠ আসনটি দখল করলেন মমতা। দিল্লির ‘ব্যর্থতা’কে পিছনে ফেলে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মহাকরণে ঢুকে সাংবাদিকদের ‘ভি’ দেখালেন। বেরনোর সময় মুলায়ম সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ঈষৎ ‘উদার’ হয়েই কথা বললেন।
প্রশ্ন ছিল, মমতার কি মুলায়মকে নিয়ে হতাশ? মমতার পাল্টা প্রশ্ন, “কেন, কেন, কেন? আমি কী করে সে কথা বলি?” তার পর নিজেই জবাব দিলেন, “আমি খুব খুশি। মনে রাখবেন, উনি এক জন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা। ওঁর সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
দিল্লি থেকে মহাকরণে পৌঁছেই কাজ করতে শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছু পরে তাঁর ঘরে যান সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসের মতো মন্ত্রীরা। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ আরও কয়েক জন। তাঁদের সঙ্গেই বাকি সময়টা কাটান মমতা। মহাকরণ থেকে বেরনোর পথে সংবাদমাধ্যমকে যা বলেছেন, ভিতরের বৈঠকেও সে কথাই বলেছেন মমতা। বলেছেন, “এই তো সবে শুরু। এখনও অনেক কিছু বাকি। আমি যা বলি, তার থেকে সরে আসি না।”
অর্থাৎ প্রথম থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যা যা বলেছিলেন, এখনও সেই অবস্থানেই রয়েছেন মমতা (অর্থাৎ, মুলায়ম অবস্থান বদলালেও নীতির প্রশ্নে তিনি তাঁর অবস্থানেই ঠিক রয়েছেন)। বস্তুত তৃণমূল সূত্রের খবর, মুলায়ম শেষমেষ যা করলেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তা নিয়ে খানিকটা ‘সংশয়’ই প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সংশয়ের মর্মার্থ মুলায়ম যা পদক্ষেপ করলেন, তা কি তিনি নিজেই করলেন? নাকি তাঁকে দিয়ে করানো হল? অর্থাৎ কংগ্রেসই কি মুলায়মকে দিয়ে গোটা বিষয়টা পরিচালনা করালো? সেই কারণেই মমতার ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, নাম না-করলেও মমতার ‘হুঁশিয়ারি’ আসলে কংগ্রেসের প্রতিই খেলা এখনও শেষ হয়নি!
পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে মমতা ইউপিএ-তে থাকবেন কিনা, থাকলেও কত দিন থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যার জবাবে অন্তত এ দিন পর্যন্ত ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলের নেত্রী। প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “এটা প্রেস কনফারেন্স নয়। আজ যা বলার বলে দিয়েছি। বাকিটা কাল বলব।”
এ দিন দুপুর পর্যন্ত প্রণব বনাম কালামের লড়াই হচ্ছে ধরে নিয়ে মহাকরণের মমতা-শিবির অনেকটাই উল্লসিত ছিল। কিন্তু বিকালে ইউপিএ-র বৈঠক, তার পরে একে একে বিভিন্ন দলের সমর্থন জানানো এবং শেষে মুলায়মের দলের ‘অন্য সুর’ শুনে রীতিমতো হতাশই দেখিয়েছে নেত্রীর সেনাপতিদের। তবে কি কোথাও রাজনীতির চালে ভুল করে ফেললেন ‘দিদি’? প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও অনেকেই তা-ই মনে করছেন। কারও মতে, সনিয়ার প্রস্তাব শুনে হামিদ আনসারির কথা মেনে নিতে পারতেন নেত্রী। কেউ বলছেন, এ ভাবে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নাম বলাটা হয়তো রাজনৈতিক ভাবে ভুল হয়ে গেল।
চিন্তা অবশ্য বেশি শোনা গিয়েছে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে। ঋণের সুদ মেটাতে বিপুল অর্থ গুনতে হচ্ছে ফি বছর, তার থেকে তিন বছর রেহাই চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বছর গড়ালেও কেন্দ্র কোনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এখন, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের দাবি মানার বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেক মন্ত্রীই। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা পাওয়ার বিষয়েও সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
নৈতিকতার প্রশ্নে অবশ্য নেত্রীকে একশো নম্বর দিচ্ছেন দলের সবাই। বলছেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য গোটা দেশে সমাদৃত মমতা। সেটা আরও এক বার প্রমাণিত হল। প্রণবের জয় নিশ্চিত বুঝেও ‘দিদি’ তাঁর বক্তব্যে অনড় থেকেছেন। এ দিন বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে ঢোকার পর থেকে অমিত মিত্র, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসদের মতো কয়েক জন মন্ত্রী দীর্ঘ সময় তাঁর ঘরে কাটিয়েছেন। বাড়ি ফেরার পথে মুলায়ম সম্পর্কে ও ‘খেলা শেষ হয়নি’ বলে যে মন্তব্য করেছেন ‘দিদি’, তাঁর সেনাপতিরাও কি সেটাই ভাবছেন? উত্তরটা অবশ্য জানা যায়নি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.