চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হল। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগের ওই ট্রেনের এক টিকিট পরীক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের একাংশ ওই টিকিট পরীক্ষককে বেধড়ক মারধরও করে। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান-সাবেহগঞ্জ লুপ লাইনের মল্লারপুর স্টেশনে। মৃত যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে তাঁর ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। রেল পুলিশ সুপার (হাওড়া) মিলনকান্তি দাস বলেন, “ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে রেল পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিককে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুরো ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতেও বলা হয়েছে।”
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “ওই কামরায় যাত্রীদের একটি দল ছিল। তাঁদের অধিকাংশের কাছেই কোনও টিকিট ছিল না। তাই ভয় পেয়ে লাফ মেরে মল্লারপুরে নামতে গিয়ে ওই যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ওই টিকিট পরীক্ষককে অহেতুক মারধর করা হয়েছে। পরে যাত্রীদেরই একাংশ তাঁকে উদ্ধার করেন।” |
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৭টা ৪০ নাগাদ ডাউন শিয়ালদহ-বারাণসী এক্সপ্রেস মল্লারপুর স্টেশনে ঢুকছিল। কিন্তু ঢোকার আগে হোম সিগনালের কাছে এক যাত্রী ওই ট্রেন থেকে পড়ে যান। কামরায় থাকা বিকাশকুমার গুপ্ত নামে এক যাত্রীর দাবি, “টিকিট পরীক্ষকের সঙ্গে ওই যুবকের কথা হচ্ছিল। যুবকের কাছ থেকে তিনি প্রথমে ৩০০ টাকা চান। পরে দেখি তাঁদের মধ্যে টানাহিঁচড়া চলছে। তারপরই ওই যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে যান।” মল্লারপুরের বাসিন্দা প্রশান্তকুমার মণ্ডল ঘটনার সময় মেয়েকে ডাউন ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে তুলে দিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “বারাণসী এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢুকলে কয়েকজন যাত্রী আমাদের জানান টিকিট পরীক্ষক এক যাত্রীকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছেন।” ট্রেনটি রওনা দিলে স্টেশনের যাত্রীরা ২ নম্বর ও ৪ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির তলা দিয়ে এক টিকিট পরীক্ষক নিজের কালো কোর্টটি খুলতে খুলতে মাঠ দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। এরপরেই জনতার একাংশ ধাওয়া করে ওই টিকিট পরীক্ষক মনোজকুমার রজককে ধরে ফেলে বেধড়ক মারে। এ দিন সকালে মল্লারপুর স্টেশনে পৌঁছে দেখা গেল স্টেশন ম্যানেজারের পাশের ঘরের বারান্দায় জনতার মারে জখম মনোজবাবু কোনওরকমে শুয়ে আছেন। উত্তেজিত জনতা তখনও তাঁকে ঘিরে রয়েছে। সংবাদিকরা মনোজবাবুকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনও কথা বলতে চাইলেন না। পরে মল্লারপুর ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে মনোজবাবুকে সেখাল থেকে উদ্ধার করে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। পরে তাঁকে অন্যত্র রেফার করা হয়। এ দিকে রামপুরহাটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোজবাবু দাবি করেন, “ওই যুবকের কাছে নলহাটি থেকে বর্ধমান স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের টিকিট ছিল। লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ার জন্য আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এরমধ্যেই মাঝে মাঝেই ওই যুবক দরজার ধারে চলে যাচ্ছিলেন। আমি ওই যুবককে দরজা থেকে সরে এসে কথা বলার জন্য ডাকি। ইতিমধ্যে আমি অন্য যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছিলাম। তার মধ্যেই ওই যুবক কখন কী করেছেন আমি বুঝতে পারিনি।” |