শোকের পরেও শেষ নেই ভোগান্তির। বিদেশ-বিভুঁয়ে বিমান দুর্ঘটনায় বড় ছেলেকে হারানোর পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ। এখনও ছেলে মহেন্দ্র সিংহ রাঠৌর ওরফে পিঙ্কুর মৃতদেহ দেখতে পর্যন্ত পাননি লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা বৃদ্ধ রাঠৌর দম্পতি। একই অবস্থা কেরলের রিজো কে এল্ডহোসের পরিজনদেরও।
গত ৩ জুন নাইজিরিয়ার লাগোসে জনবহুল এলাকায় ডানা এয়ারলাইন্সের এমডি-৮৩ বিমান ভেঙে পড়ে ১৯৩ জন মারা গিয়েছিলেন। মহেন্দ্র সিংহ রাঠৌর ছিলেন ওই বিমানের সহকারী চালক। লাগোসে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার রিজো কে এল্ডহোসও লাগোস থেকে আবুজাগামী ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন। ওই বিমান দুর্ঘটনার দু’সপ্তাহ কাটতে চললেও মৃতদের দেহ কবে এ দেশে তাঁদের স্বজনের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হবে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
কেন হচ্ছে এই দেরি? নাইজিরিয়ায় ভারতীয় হাই কমিশনার মহেশ সচদেবের অফিস থেকে ইতিমধ্যে
|
মহেন্দ্র সিংহ রাঠৌর |
বিদেশ মন্ত্রকের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার লাগোসে হাই কমিশনারের অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার প্রধান আধিকারিক রানি মালিক এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া দেহগুলি প্রায় চেনাই যাচ্ছে না। এত জন আরোহীর দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়ে শনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। তাই সময় লাগছে।” ভারতীয় হাই কমিশনারের প্রতিনিধিরা লাগোসের গভর্নরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
মালিক জানিয়েছেন, নাইজিরিয়ায় ডিএনএ পরীক্ষার যথাযথ পরিকাঠামো নেই। ফলে, ডিএনএ মেলানোর কাজটা আমেরিকায় সারা হবে। অর্থাৎ, ভারত ও নাইজিরিয়া থেকে সংগৃহীত ডিএনএ-র নমুনা আমেরিকায় পাঠানোর পরে পরীক্ষা করা হবে। ওই পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে লাগোস থেকে দেহ পাঠানো হবে। কত দিনে এই জটিল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে, তা এখনই কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে লেকগার্ডেন্সের বাসিন্দা পিঙ্কুর বাবা ঈশ্বর সিংহ রাঠৌর ও মা পুষ্পাদেবী এখন দিল্লিতে। কখনও বিদেশ মন্ত্রকের দফতর, কখনও নাইজিরীয় দূতাবাসে হন্যে হয়ে দরবার করছেন তাঁরা। ছ’বছরের ছেলে সূর্যকে নিয়ে পিঙ্কুর স্ত্রী ইশা রয়েছেন পরিবারের পূর্বপুরুষের ভিটে বিকানিরে। বিমান দুর্ঘটনার পরেই মহেন্দ্রর ভাই রাজেন্দ্র লাগোসে পাঠানোর জন্য তাঁর ডিএনএ-র নমুনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিন বাদে ওই নমুনা যথেষ্ট নয় বলে রাঠৌর পরিবারকে জানানো হয়। ফলে, এ দিন দিল্লিতে ডিএনএ ল্যাবস ইন্ডিয়া সংস্থার ল্যাবরেটরিতে ফের ডিএনএ পরীক্ষা জন্য নমুনা দিয়েছেন পিঙ্কুর বৃদ্ধ মা-বাবা।
ঈশ্বর সিংহ রাঠৌর এ দিন দিল্লি থেকেই বললেন, “প্রথমে বলা হয়েছিল, আমাদের ছোট ছেলের ডিএনএ-র নমুনা দিলেই হবে। এখন বলা হচ্ছে, আমার ও আমার স্ত্রীর ডিএনএ-র নমুনাও লাগবে। এটা প্রথমেই বলা হলে, খামোকা এতগুলো দিন নষ্ট হতো না।” ডিএনএ ল্যাব সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রিজো কে এল্ডহোসের পরিবার থেকে ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহও এখনও বাকি।
ডিএনএ-র নমুনা হিসেবে কী পাঠাতে হবে, তা নিয়ে কেন এই বিভ্রান্তি? দিল্লির ল্যাবরেটরির কর্তা রবি কিরণ জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা নিয়ে ভারত, নাইজিরিয়া ও আমেরিকায় আলাদা নিয়ম। রবি কিরণের কথায়, “আন্তর্জাতিক আইন মেনে ডিএনএ-র নমুনা পাঠানো হচ্ছে। মৃতদেহ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনও রকম আইনি জটিলতা এড়াতেও দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক।”
এত ঝকমারির পরেও শেষকৃত্যের জন্য দেহ কবে আসবে, তা জানেন না মহেন্দ্র বা রিজোর পরিজনেরা। |