মামলা চলছে দীর্ঘদিন। নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা দেওয়ার জন্য বারবার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তা সত্ত্বেও হলদিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আইকেয়ার পরিচালিত বি সি রায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদন খারিজ নিয়ে মামলায় সরকার হলফনামা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করল উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানির সময় বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত জানতে পারেন, রাজ্য সরকার এ দিনও কোনও হলফনামা পেশ করেনি। তখনই বিচারপতি জানিয়ে দেন, আগামী বুধবার রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দিতেই হবে। এবং এটাই শেষ সুযোগ। শুক্রবার আবেদনকারীরা ওই হলফনামার লিখিত জবাব দেবেন। তার পরের সোমবার অর্থাৎ ২৫ জুন মামলার চূড়ান্ত শুনানি হবে। আর কোনও বিলম্ব সহ্য করবে না হাইকোর্ট।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য সরকার ও মেডিক্যাল কাউন্সিল হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দেয়। অনুমোদন বাতিলের কারণ হিসেবে মূলত পরিকাঠামোর অভাবের কথা জানানো হয়। অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই কলেজের পরিচালন সমিতি ও কলেজ-কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে মামলা করেন। প্রথম দিন শুনানির সময়েই বিচারপতি রাজ্য সরকারকে তাদের বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেন। কিন্তু সরকার এখনও পর্যন্ত তা জমা দেয়নি।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার, রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কাউন্সিল অনুমোদন দেওয়ার পরেই ওই মেডিক্যাল কলেজে পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকার কোনও কারণ না-দেখিয়ে ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দেয়। পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে বলে যুক্তি দেখিয়ে অনুমোদন বাতিল করে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়।
সুব্রতবাবু বলেন, পরিকাঠামো সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বক্তব্য থাকতেই পারে না। কারণ যথাযথ পরিকাঠামো আছে কি না, তা দেখার পরেই অনুমোদন দেয় মেডিক্যাল কাউন্সিল। পরিকাঠামো না-থাকলে তো মেডিক্যাল কাউন্সিলই অনুমোদন দিত না। কলেজ-কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে কিছু তথ্য গোপন করেছে বলে অভিযোগ তুলে পরবর্তী কালে অনুমোদন বাতিল করে মেডিক্যাল কাউন্সিল। একই বাড়িতেই যে মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ চলছে, সেই তথ্য তাদের কাছে গোপন করা হয়েছিল বলে কাউন্সিলের অভিযোগ। ইতিমধ্যে অনেক আইনি টানাপোড়েনের পরে ওই কলেজের পড়ুয়ারা এমবিবিএসের ফার্স্ট সেমেস্টার পরীক্ষায় বসতে পারবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পেয়েছে। ২৬ জুন সেই পরীক্ষা হওয়ার কথা। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা দেখছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষও। তাঁরা চান, উচ্চ আদালতে তাঁদের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। কিন্তু হলফনামা পেশের ক্ষেত্রে সরকারের গড়িমসি চলছেই।
আবেদনকারীদের কৌঁসুলির বক্তব্য শোনার পরে হলফনামা দাখিলের চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেন বিচারপতি। জানিয়ে দেন, হলফনামা দিতে ফের দেরি করলে তার অপেক্ষায় না-থেকেই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শুরু করে দেওয়া হবে। |