পরিবর্তে ‘চাকরি’ দিয়ে অন্যত্র নিয়োগ
কর্মবিরতি রুখতে হাউসস্টাফ রাখবে না রাজ্য
‘কথায়-কথায়’ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ঠেকাতে এ বার সরকারি হাসপাতালে হাউসস্টাফশিপ-ই তুলে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। পরিবর্তে চালু হবে ‘জুনিয়র রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার’ পদ।
স্বাস্থ্য-কর্তাদের বক্তব্য: হাউসস্টাফদের উপরে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না-থাকার সুযোগেই তাঁরা নিয়মের তোয়াক্কা না-করে যখন-তখন কাজ বন্ধ করার সাহস পাচ্ছেন। ‘জুনিয়র রেসিডেন্ট’ মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে সরকারি পদে বসিয়ে তাঁদের কিছুটা হলেও নিয়মের শৃঙ্খলে বাঁধা যাবে। এ-ও দেখা হবে, যে ডাক্তার যে মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন, সেখানেই যেন তিনি ওই ‘চাকরি’ না-পান। কারণ, তেমনটা হলে নতুন ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হতে পারে বলে দফতর মনে করছে।
দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা বা অন্য নানা দাবিতে যখন-তখন ‘কর্মবিরতি’কেই আন্দোলনের অন্যতম মূল হাতিয়ার করে আসছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বাম আমলে বহু বার হয়েছে। সরকারি তরফে অনুরোধ-আবেদন-হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়নি। নতুন সরকারের আমলেও গত এক বছরে দু’বার জুনিয়র ডাক্তারদের বড় ধরনের কর্মবিরতির সম্মুখীন হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে, পরে আরজিকরে। দু’বারই স্বাস্থ্য-কর্তারা জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে নামাতে হিমসিম খেয়েছেন। আরজিকরে মীমাংসা-বৈঠক করতে গিয়ে তো ঘেরাও হয়ে পড়েন খোদ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা!
এই সমস্যার সুরাহায় নতুন ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। স্বাস্থ্য-অফিসারদের দাবি, যে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছেন, সেখানেই হাউসস্টাফশিপ করার সুযোগ থাকে বলে কিছু জুনিয়র ডাক্তার একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন ধরে ‘মৌরসিপাট্টা’ গড়ে তোলার সুযোগ পান। তাঁদের সকলকে ‘চাকরি-সূত্রে’ অন্যত্র পাঠানো হলে সেই প্রবণতা কমবে। এমনকী, ‘জুনিয়র রেসিডেন্ট’দের গ্রামে পাঠানোর পরিকল্পনাও সরকারের আছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাউসস্টাফরা এখন স্টাইপেন্ড পান। তাঁরা সরকারি চাকুরে নন। জুনিয়র রেসিডেন্টরা সরাসরি সরকারি চাকুরে হবেন। ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ওঁদের মনোনীত করা হবে। ফ্রি-ল্যান্সার হয়ে থাকার দিন শেষ হবে।”
সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা এমনিতেই বহুলাংশে জুনিয়র ডাক্তারনির্ভর। এমবিবিএস করার পরে এক বছরের ইন্টানর্র্শিপ করলে রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যায়। তার পরে হাউসস্টাফ হওয়ার সুযোগ থাকে, যদিও তা বাধ্যতামূলক নয়। ইন্টার্ন ও হাউসস্টাফেরাই সরকারি হাসপাতালের অন্যতম স্তম্ভ। ইনডোর-আউটডোর তো বটেই, এমনকী ইমার্জেন্সিতেও সিংহভাগ জুড়ে থাকেন তাঁরা। সুতরাং তাঁরা কাজ বন্ধ করলে পরিষেবা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য-কর্তারা অবশ্য বলছেন, ইন্টার্ন-হাউসস্টাফ যৌথ দায়িত্বটা কাগজে-কলমে। কাজ করেন মূলত ইন্টার্নরা। অধিকাংশ হাউসস্টাফ যে হেতু স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনে ব্যস্ত থাকেন, তাই তাঁরা নিজেদের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ করে সপ্তাহে দু’-এক দিনের বেশি কাজে আসেন না বলে অভিযোগ। ফলে পরিষেবা এমনিতেই ধাক্কা খায়। কর্তাদের আশা, জুনিয়র রেসিডেন্ট পদ চালু হলে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকার প্রবণতাও অনেকটা রোখা যাবে। পাশাপাশি ‘চাকরি’র আকর্ষণ বাড়াতে ‘জুনিয়র রেসিডেন্টের’ বেতনের অঙ্কটা হাউসস্টাফ-ভাতার তুলনা কিছু বেশি করার কথাও ভাবছে দফতর। এই উদ্যোগকে চিকিৎসকমহল কী ভাবে দেখছে?
সরকারের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসক সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।’ সংগঠনের সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, “আশা করা যায়, সরকারি চাকুরে হলে জুনিয়র ডাক্তারদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও এই ব্যবস্থা চালু হওয়া জরুরি।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, যেখানে দিনের পর দিন হাউসস্টাফেরা হাসপাতালে কাজ না-করে কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে ডিউটি করেও পার পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেখানে জুনিয়র রেসিডেন্টরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কি না, তা দেখবে কে?
এর স্পষ্ট উত্তর স্বাস্থ্য-কর্তারা দিতে পারেননি। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, “যাঁদের নজর দেওয়ার কথা, সেই সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই তো দুপুর না-গড়াতেই হাসপাতাল ছেড়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে বেরিয়ে যান! সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তাড়াবে কে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.