পরিস্থিতি দেখতে এল ইউনেস্কোর দল
দায় এড়ানোর টানাপোড়েনে আটকে টয় ট্রেনের সংস্কার
রেল বলছে, পূর্ত দফতর রাস্তা না সারিয়ে দিলে দার্জিলিঙে টয় ট্রেন চালানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। পূর্ত দফতর বলছে, তারা কেবল ওই রাস্তার দেখভাল করে, মালিকানা কেন্দ্রীয় সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রকের। তারা অর্থ মঞ্জুর করলেই রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত দেওয়া যাবে। এই টানাপোড়েনেই গত দু’বছর ধরে পুরোটা পথ চলা বন্ধ রয়েছে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে আনন্দের ‘হেরিটেজ যাত্রা’।
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল সম্প্রতি একটি চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষকে। তাতে তিনি বলেছেন, ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক (হিলকার্ট রোড) সারানোর আর্জি জানিয়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এক বছর ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলছে। একাধিক চিঠি চালাচালিও হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। চিঠিতে মিত্তল অভিযোগ করেছেন, রাস্তা সারাইয়ে পূর্ত দফতর তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টানা পথে ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না।
মিত্তল বলেছেন, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে যে হেতু ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তাই বিদেশি পর্যটকেরা পাহাড়ে এলেই ন্যারো গেজ ট্রেনের খোঁজ করে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত একটানা পথ দেড় বছরের উপরে বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক স্তরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চিঠিতে মিত্তল আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইউনেস্কো যদি ওই তকমা সরিয়ে নেয় তা দেশের পক্ষে লজ্জারই হবে।
রেলের হিসেবে, টয় ট্রেনের যাত্রাপথ মোট ৮২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০১০-এর ২০ সেপ্টেম্বর ধস নেমে গয়াবাড়ি থেকে মহানদীর মধ্যে প্রায় ৪৫০ মিটার রাস্তা পুরোপুরি ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় ওই অংশের ট্রেনযাত্রা। পরের বছর ফের ভূমিকম্পে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দার্জিলিঙের বহু এলাকা। ভেঙে পড়ে রংটং থেকে তিনধারিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার রাস্তা। ফলে ওই অংশেও বন্ধ করে দিতে হয় টয় ট্রেন।” তারপর থেকে নিউ জলপাইগুড়ি-রংটং এবং দার্জিলিং-কার্শিয়াং পর্যন্ত টয় ট্রেন চালানো হলেও পুরোদস্তুর হেরিটেজ যাত্রার স্বাদ পাচ্ছেন না ভ্রমণার্থীরা।
এ বার মানুষের ঢল নেমেছে পাহাড়ে। ভ্রমণার্থীদের কথা ভেবে দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রক। গত ৩ জুন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং আইআইটি (দিল্লি)-র দুই ভূবিজ্ঞানীকে মাথায় রেখে তারা একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছিল পাহাড়ে। এ ছাড়াও পাহাড়ের যে সব এলাকা দিয়ে টয় ট্রেনের লাইন গিয়েছে সেখানকার বাস্তব অবস্থা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল দিল্লির একটি সংস্থাকে। পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “আমরা এখনও ওই রিপোর্ট পাইনি। তবে সড়ক মন্ত্রকের সঙ্গে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারেরা যোগাযোগ রাখছেন।” রাজ্য পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “তিনধারিয়ায় রাস্তা এমন ভাবে ধসে গিয়েছে যে ১৫০ মিটার নীচ থেকে পাহাড় কেটে রাস্তা তুলতে হবে।” মহাকরণ সূত্রের খবর, মহানদী থেকে গয়াবাড়ির মধ্যে পাগলাঝোরা এলাকা মেরামতের জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা চেয়ে সড়ক মন্ত্রকের কছে চিঠি পাঠিয়েছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু এখনও সেই অনুমোদন মেলেনি।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য ও কেন্দ্রের কাজে দেরি হচ্ছে দেখে তিনধারিয়া এলাকা নিজেরাই সারিয়ে নেবে বলে পূর্ত দফতরের কাছে অনুমতি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) চেয়েছিল দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে। পূর্ত দফতর শর্তসাপেক্ষে ওই অনুমতি দিলেও কাজ আর এগোয়নি। এই ব্যাপারে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের অধিকর্তা এম বি ভুতিয়া বলেন, “মাত্র দু’দিন আগে আমি এই পদে যোগ দিয়েছি। তাই বিস্তারিত না জেনে কিছু বলতে পারব না।” ভুতিয়া জানিয়েছেন, টয় ট্রেনের সামগ্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ইউনেস্কোর একটি দল দার্জিলিঙে এসেছে। কয়েক দিন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.