|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন |
সমর্থনের প্রশ্নে তৃণমূলকে চাপে রাখতে চায় মোর্চা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের উপরে যেমন চাপ রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রায় একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) নির্বাচন এবং শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগামী শনিবারের বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপতি পদে মমতা-মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করার পথে হাঁটবে কি না, তা স্পষ্ট করল না তারা।
দার্জিলিং পাহাড়ের তিন জন এবং কালচিনির মোর্চা সমর্থিত নির্দল বিধায়ককে ধরে মোর্চার পক্ষে বিধায়কের সংখ্যা চার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন যদি ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়ায়, সে ক্ষেত্রে মোর্চার ভোটও গুরুত্ব পেতে পারে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। বৃহস্পতিবার রাতে কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্পামারি বলেন, “১৬ জুন ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হলে আমরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কাকে সমর্থন করব, সেই ঘোষণা করার দিকে এগোব। বৈঠক যদি ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মোর্চার তরফের বিধায়কেরা পদত্যাগ করবেন।” |
 |
দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে সভায় বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: রবিন রাই |
শনিবারের বৈঠকের উপরে মোর্চার অনেক সিদ্ধান্তই যে নির্ভর করছে, সেই ইঙ্গিত মিলেছে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের কথাতেও। এ দিন দার্জিলিং জিমখানা ক্লাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সভায় গুরুঙ্গ বলেছেন, “পাহাড়ের চার (দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং মিরিক) পুরসভা থেকে চেয়ারম্যানদের ইস্তফা দিতে বারণ করেছি। ১৬ জুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করব। বৈঠকে আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস মিললে সব ধরনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেব। না হলে যে কোনও ধরনের আন্দোলনের জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
আন্দোলন কেমন হতে পারে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই পাহাড়ের মোর্চা বিধায়কদের বিধানসভায় যোগাযোগ রাখতে বারণ করা হয়েছে। শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশকে ‘মমতা-সেন কমিটির রিপোর্ট’ বলে কটাক্ষ করে গুরুঙ্গের বক্তব্য, ‘‘শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ আদতে রাজ্য সরকারের ইঙ্গিতেই হয়েছে। এখন রাজ্য সরকারকে ওই রিপোর্ট খারিজ করতে হবে। না হলে পাহাড়ের সব সরকারি অফিস বন্ধ করা হবে। বিধায়কেরা পদত্যাগ করবেন। লাগাতার অনশন হবে।” পাশাপাশি, আজ, শুক্রবার থেকে দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় মঞ্চ তৈরি করে রিলে-অনশন কর্মসূচি শুরু করার ঘোষণাও করেছেন মোর্চার ওই শীর্ষ নেতা।
বস্তুত, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, মোর্চা ‘নরমে-গরমে’ চলছে। রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে পাহাড়ে নিজেদের জনভিত্তি ধরে রাখার পাশাপাশি, আলোচনার রাস্তা খোলা রাখার কথা বলে দলের ‘ঘরে-বাইরে’ যে ‘ক্ষোভ ও চাপ’ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করার কৌশল নিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থনের প্রশ্নে ‘ধোঁয়াশা’ রেখে রাজ্যের প্রধান শাসক দলের উপরে ‘চাপ বাড়ানো’র কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে মোর্চার এই ‘অবস্থান’ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য নানা পদক্ষেপ করেছেন। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে পাহাড়ের উন্নয়নে আমরা বদ্ধপরিকর।” শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশের বিরোধিতায় এ দিনই আন্দোলনে নেমেছে ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয় তারা। ওই কর্মসূচিতে আইএনটিইউসি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি অলোক চক্রবর্তী হাজির ছিলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পৌঁছে দেব। পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে যে কোনও মূল্যে আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করব। শান্তি বিঘ্নিত হলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে।”
মংপং বনবাংলোয় এ দিন শিবু সোরেনের সঙ্গে বৈঠক করে সপার্ষদ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চায় (শিবু সোরেন গোষ্ঠী) যোগ দেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ থেকে ‘বহিষ্কৃত’ নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীরা। এ দিনই সকালে কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়ে জিটিএ গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন জিএনএলএফের শীর্ষ নেতা সুবাস ঘিসিং। আজ, শুক্রবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাটির শুনানি হতে পারে। |
|
|
 |
|
|