বিধানসভার এ বারের অধিবেশনেও সংশোধিত জমি অধিগ্রহণ-পুনর্বাসন বিল পেশ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। রাজ্য বিধানসভার দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই অধিবেশনে ১৪টি বিল পেশ হওয়ার কথা। তবে সংশোধিত জমি অধিগ্রহণ বিলটি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সরকারি ভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি এ দিন পর্যন্ত তাঁর কাছে আসেনি বলে স্পিকার জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে জমি বিলটি ‘বেসরকারি ভাবে’ বিধায়কদের একাংশের মধ্যে বিলি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিলে রাজ্যপালের সই না-থাকায় তা আর সভায় পেশ করা হয়নি।
এ বারের অধিবেশনের শুরুতেই ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ২০১০ (সংশোধিত)’ বিল পেশ করা হবে। এই বিলটি বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বিলটি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। স্পিকার এ দিন বলেন, “দু’টি সংশোধনী দিয়ে রাজ্যপালের মাধ্যমে বিলটি ফেরত পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। এ বার সেই সংশোধনী নিয়ে অধিবেশনে বিলটির উপরে আলোচনা হবে।” এ ছাড়া, ‘ওয়েস্টবেঙ্গল টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০১২’, ‘এইচআইটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল,২০১২’-সহ ১৪টি বিল নিয়ে সভায় আলোচনার কর্মসূচি আছে বলে স্পিকার জানান। |
বিধানসভা শুরুর আগের দিন বিধানসভা ভবনে স্পিকারের ঘরে সর্বদলীয় বৈঠক। ছবি: দেবাশিস রায় |
শোকপ্রস্তাবের পরে আজ বিধানসভার অধিবেশনের প্রথম দিন মুলতবি হয়ে যাওয়ার কথা। সোমবার থেকে পুরোদমে অধিবেশন চলবে। আলোচনা হবে সরকারের বিভিন্ন দফতরের বাজেট নিয়ে। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত অধিবেশন চলার কথা। অধিবেশনের আগে এ দিন প্রথামাফিক সর্বদলীয় বৈঠক করেন স্পিকার। বৈঠকে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে স্পিকার বলেন, “প্রথাগত ভাবে বিধানসভার অধিবেশনের আগে সর্বদলীয় বৈঠক করা হয়। বিধানসভার ঐতিহ্য বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে অধিবেশন চালানোর জন্য আমি সমস্ত দলের প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
অধিবেশন শুরুর আগে আজ বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পরে শাসক তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক হবে। বৈঠক হওয়ার কথা বাম পরিষদীয় দলেরও। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “বিরোধীদের বক্তব্যের জন্য যাতে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়, সেই ব্যাপারে আমরা আবেদন জানিয়েছি।” প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রীরা যাতে নিয়মিত হাজির থেকে উত্তর দেন, বিল নিয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী-সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা উপস্থিত থেকে জবাবি বক্তৃতা করেন, সেই বিষয়েও স্পিকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, গত বছর বেশ কিছু দফতরের বাজেট শেষ পর্যন্ত ‘গিলোটিন’ হয়ে গিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতে-থাকা বেশ কয়েকটি দফতরও।
তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে আজ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকছেন না। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু এ দিন বলেন, “আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী আগামী মঙ্গলবার অধিবেশনের পরে টাউন হলে পরিষদীয় দলের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করবেন।” অধিবেশনের সম্ভাব্য বিল এবং দফাওয়াড়ি বাজেটের বিষয়ে মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে তাঁরা আজ তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে কথা বলবেন বলে পরিষদীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন। কংগ্রেসও তাদের ‘রণকৌশল’ ঠিক করবে পরিষদীয় দলের বৈঠকে। |