|
|
|
|
বন্দিমুক্তির প্রশ্নে বিতর্ক |
তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতার কথা বিধায়কের বিলি করা ফর্মে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বন্দিমুক্তির দাবিতে রীতিমতো ‘ফর্ম’ ছাপিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন একাধিক তৃণমূল বিধায়ক। নতুন সরকার এক বছর পার করলেও জঙ্গলমহলের এক জন রাজনৈতিক বন্দিও মুক্তি পাননি বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক এ বার বন্দিমুক্তির দাবিতে ‘তৎপর’ হয়েছেন।
‘ফর্ম’ ছাপিয়ে স্বাক্ষর-সংগ্রহে উদ্যোগী হয়েছেন গোপীবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মুও বন্দি-তালিকা তৈরি করে রাজ্যের আইনমন্ত্রীর কাছে ‘তদ্বির’ শুরু করেছেন। চূড়ামণিবাবুর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল ব্লক মিলিয়ে ইতিমধ্যে তিনশোরও বেশি ‘ফর্ম’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকশো ফর্ম বন্দিদের সই-সহ পাঠানোর তোড়জোড় চলছে।
তবে, এই ফর্মের বয়ান নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্দিমুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত ‘সন্ত্রাস-বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চে’র সম্পাদক অশোকজীবন ঘোষের অভিযোগ, “যে-ফর্মে বন্দিদের সই করানো হচ্ছে, তাতে তাঁরা তৃণমূল করতেন বা তৃণমূল সমর্থককৌশলে এমন মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যা আপত্তিকর।” |
শ্রীকান্ত মাহাতো |
দুলাল মুর্মু |
চূড়ামণি মাহাতো |
|
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ওই ফর্মে লেখা হয়েছে, ‘২০০৬ থেকে সিপিএম-বিরোধী তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দল নিয়ে গঠিত ‘পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে লোকসভা, বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছি। তাই সিপিএম সরকার অন্যায় ভাবে মামলা দিয়েছে। আপনি বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ইস্তাহারে বলছিলেন, বিনা দোষে বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। অতএব আশা, মা-মাটি-মানুষের সরকার রাজনৈতিক বন্দিদের মামলা প্রত্যাহার করে সহায়তা করবেন’। অশোকজীবনের প্রশ্ন, “তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ না হলে কি বন্দিদের মুক্তি মিলবে না!”
এ ব্যাপারে চূড়ামণিবাবুর জবাব, “ফর্মে কোথাও সরাসরি ‘তৃণমূল করি’, বন্দিদের কাছ থেকে এমন কোনও স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে না। মুচলেকার প্রশ্নই ওঠে না। ফর্মে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দলের কথাই বলা হয়েছে।” তার মধ্যে কি মাওবাদীদেরও ধরা হচ্ছে? বিধায়কের বক্তব্য, “সাজানো মামলা প্রত্যাহারই চাওয়া হচ্ছে।” তৃণমূল বিধায়কদের এই উদ্যোগ নিয়ে জঙ্গলমহলের নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিপিএম নেতার আবার কটাক্ষ, “মাওবাদী-তৃণমূল যে একজোট, তা তো আমরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি। বন্দিমুক্তির জন্য তৃণমূল বিধায়কদের তৎপরতা তো থাকবেই!”
চূড়ামণিবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “আমাদের নির্বাচনী ইস্তাহারেই বন্দিমুক্তির কথা বলা হয়েছিল। এক সময়ে নির্বিচারে মানুষজনকে ‘মাওবাদী’ বলে গ্রেফতার করেছে বাম-সরকার। সেই সব মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করাই উচিত।” নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মুও বলেন, “এটা তো ঠিক, গত ৩-৪ বছরে বহু মানুষকে ‘মাওবাদী’ তকমা দিয়ে মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমন মানুষজনের নামের একটি তালিকা তৈরি করছি। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।” শালবনির তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোরও বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের মানুষের উপর থেকে মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন।” বস্তুত, শ্রীকান্তবাবুকেও পুলিশ-ক্যাম্পে হামলার এক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলে যেতে হয়েছিল। জামিন হলেও মামলা এখনও ঝুলছে।
নিজের দলের বিধায়কদের বন্দিমুক্তি-সংক্রান্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্যের আইন ও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “রাজ্য সরকার যে বন্দিমুক্তি রিভিউ-কমিটি গড়েছে, সেই কমিটির কাছে যেমন যেমন আবেদন আসবে এবং কমিটি যে-রকম সুপারিশ করবে, সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবে সরকার।” |
ফাইল চিত্র |
|
|
|
|
|