ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের বলছি,
জার্মানির একটা ম্যাচও ছেড়ো না
রোবট। যন্ত্র। যান্ত্রিক।
বিশ্বের যে কোনও জায়গায়, যে কোনও ভাষায়, গত কয়েক দশকে জার্মানির ম্যাচ রিপোর্টগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করলে (এমনকী যখন পশ্চিম জার্মানি ছিল তখনও) এই তিনটে শব্দ পেয়ে যাবেন। বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে যেগুলো ব্যবহার হত।
কিন্তু গত রাতে জার্মানির ম্যাচ দেখার পর মনে হচ্ছে, বিশ্বের যাবতীয় ফুটবল-লিখিয়ের এ বার সময় হয়েছে জার্মান ফুটবল থেকে এই তিনটে শব্দ বরাবরের মতো ছেঁটে ফেলার। এক কথায়, নিজেদের ফুটবলকে একটা আলাদা উচ্চতা, একটা আলাদা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে জার্মানরা। যা দেখার পর একটা ভবিষ্যদ্বাণী প্রবল ঝুঁকি নিয়েও করে ফেলছি। এই ইউরো তো বটেই, পরবর্তী বিশ্বকাপ, পরের ইউরো, এমনকী ২০১৮ বিশ্বকাপেও ফুটবলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টিম হতে চলেছে জার্মানি।
কেন বলছি?
জার্মান ডিফেন্সের দাপটে ভূপতিত রবেন।
টিমটার গড় বয়স দেখুন। মাত্র চব্বিশ। আপনার হাতে যদি এ রকম একটা তরুণ টিম থাকে, চোখ জুড়োনো ফুটবল আশা করতেই পারেন। ফুটবলারদের বয়স অল্প বলে, ভয়-ডরের কোনও ব্যাপার থাকবে না। সঙ্গে নিজেদের চারিত্রিক কাঠিন্যকে জার্মানদের ধরে রাখার ব্যাপারটা যোগ করুন। বিশ্বকাঁপানো একটা টিম পেয়ে যাবেন।
ইউরোতে ফিরি। প্রথম ম্যাচের পর প্রচুর সমালোচনা হচ্ছিল জোয়াকিম লো-র টিমের। বলা হচ্ছিল, চেনা ফুটবলটা খেলতে পারছে না জার্মানি। কিন্তু বিশ্বের সেরা টিমগুলোর তো এখন এটাই স্ট্র্যাটেজি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ম্যাচে জার্মানদের লক্ষ্য ছিলস্রেফ তিন পয়েন্ট তোলা। তুলেছে।
গত রাত থেকে জার্মানরা নিজেদের আসল খেলাটা খেলতে শুরু করল। অনেকটা ওদের দেশের আধুনিক গিয়ার সমেত দুর্ধর্ষ সব গাড়ির মতো। এত মসৃণ ভাবে, এত দ্রুতগতিতে ওরা ডাচদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল যে, পুরো দিশাহারা হয়ে গেল রবেনরা। জার্মানদের কোনও জবাবই ছিল না ওদের কাছে।
ডাচদের মুশকিল হচ্ছে, কাগজে-কলমে ওরা তুমুল শক্তিধর দেখায়। কিন্তু আদতে বড় বেশি ব্যক্তি-নির্ভর টিম। ফুটবল কেন, বিশ্বের যে কোনও খেলার পক্ষেই ব্যাপারটা খারাপ। ফান পার্সি একটা গোল করল ঠিকই, কিন্তু আমি অন্তত ওর থেকে হতাশা ছাড়া কিছু পাইনি।
উল্টো দিকে জার্মানিকে দেখুন। সত্যিকারের টিমের মতো খেলল। ওদের পাসিং, গতি---সব কিছুই তো বিশ্বফুটবলে একটা নতুন লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করে দিচ্ছে। বাকিদের যা এখন ছুঁতে হবে। বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার, মারিও গোমেজ আবার মহাতারকা হওয়ার অপেক্ষায়। বিশ্বের যে কোনও কোচকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, সবাই এক কথায় সোয়াইনস্টাইগারের মতো একজনকে চাইবে নিজের মাঝমাঠে। গতি, ফিনিশিং, ফিটনেসের যে ছবি গত রাতে আমি পেলাম বাস্তিয়ানের ফুটবল থেকে, তাতে ওর ভূমিকা বোঝাতে গেলে একটাই শব্দ ব্যবহার করতে হয়। ইঞ্জিন। বাস্তিয়ান পুরো জার্মান টিমটারই ‘ইঞ্জিন’। একটা একটা করে ম্যাচ এগোচ্ছে, আর তত যেন আত্মবিশ্বাসের চুড়োয় উঠছে সোয়াইনস্টাইগার। টিমের সেরা প্লেয়ার এ রকম খেলতে শুরু করলে যে কোনও কোচকেই নিশ্চিন্ত দেখাবে।
সোয়াইনস্টাইগার: জার্মানির ইঞ্জিন।
আমি তো আমার ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের কাছে অনুরোধ করব যে, তোমরা জার্মানির একটা ম্যাচও ছেড়ো না। নিজেদের জন্যই ছেড়ো না। আসলে জার্মানির খেলা দেখলে শুধু ফুটবলাররা কেন, আমিও অনেক কিছু শিখতে পারব। ওদের ফর্মেশন, সেট পিস মুভমেন্ট, সব কিছু থেকেই অনেক শেখার আছে।
একজন ইংরেজ হিসেবে কি জার্মানদের খুব বেশি স্তুতি করে ফেললাম? হ্যাঁ, আমি করেছি। আর ঠিক করেছি। আমার দেশ ইংল্যান্ড যদি শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠে, জার্মানদের নিয়ে বেশি চিন্তা করব না। বরং এটা ভাবব যে, আমার টিম তো অন্তত ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু তার আগে জার্মানির মুখে পড়লে? ভাবলে ভয় পাচ্ছি। বেশ ভয় পাচ্ছি।
আর খুব বেশি ইংরেজ কিন্তু জার্মানদের নিয়ে এমন দরাজ সার্টিফিকেট দেবে না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.