স্পেনের ‘তিকিতাকা’য় ফুটল রক্তগোলাপ
স্পেন-৪ (তোরেস ২, সিলভা, ফাব্রেগাস)
আয়ার্ল্যান্ড-০
নপ্রিয় স্প্যানিশ গায়ক এনরিকে ইগ্লেসিয়াসই গত ইউরোয় গেয়েছিলেন, ‘ক্যান ইউ হিয়ার মি?’ ফুটবলের সেই গানটার শুরুর দু’লাইনে রয়েছে, ‘আমি অসাড় হলেও তোমায় অনুভব করতে পারি/ কখনও আমি অন্ধ, তবু আমি তোমায় দেখতে পারি।’
মনে হচ্ছে, ইনিয়েস্তা-জাভি-সিলভাদের পাসিং ফুটবলের জন্যই ওই গানটা গাওয়া। চোখ বন্ধ করে যেন এই মিডফিল্ডাররা মাঠে বল আর একে অন্যের পজিশন দেখতে পারেন। অসাড় হলেও বলটার স্পর্শ অনুভব করতে পারেন। বৃহস্পতিবারের মাঝমাঠে ইনিয়েস্তা-জাভিরা ফেরারি গাড়ি হলে, আয়ার্ল্যান্ডের হোয়েলান-অ্যান্ড্রুরা যেন ন্যানো। চার মিনিটে তোরেসের দুর্দান্ত গোলটার পরেই আইরিশ মাঝমাঠে লাল পতাকা বসে গেল। কী লিখব? মাঠ জুড়ে রক্তজবা ফুটে উঠছিল স্পেনের পাসিং ছটায়? না, রক্তজবায় গন্ধ নেই। ওটা রক্তগোলাপ হবে!
ইগ্লেসিয়াস সুরে জানতে চেয়েছিলেন, “তুমি কি আমায় দেখতে পাচ্ছো?’’ আর ইনিয়েস্তার নিখুঁত পাস থেকে বলটা পেয়ে ১-০ করে তোরেসও কানে ফোন লাগানোর ভঙ্গিতে দৌড়লেন। ওই মুদ্রাতেও বলা হচ্ছিল, “তুমি কি আমায় দেখতে পাচ্ছো?” দেখতে তো হবেই! গত ম্যাচটায় মুণ্ডুহীন ৪-৬-০ ছকে নেমে ড্র করে স্পেন কোচ এ দিন মুণ্ডুসমেত (ফরোয়ার্ড) নেমেছিলেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোচও বুঝে গেছেন, ‘মুণ্ডু গেলে খাবটা কী/ মুণ্ডু ছাড়া বাঁচব না কি?’ ৪-৩-২-১ ছকে মুণ্ডু জুড়তেই স্পেনের তিকিতাকা ফুটবলের সম্পূর্ণ অবয়ব ফুটে উঠল। চোখ, মুখ, হৃদয়।
তোরেস: জোড়া গোলের নায়ক
এই ফুটবলের মুণ্ডু তোরেস হলে, হৃদয়ের নাম ইনিয়েস্তা, চোখের নাম জাভি, মস্তিস্কের নাম সিলভা। মরমি স্নিগ্ধতা তিন জনের বোঝাপড়ায়। বার্সেলোনার বিখ্যাত ফুটবল স্কুল ‘লা মাসিয়া’য় নিজের ঘরে কিশোর ইনিয়েস্তা টাঙিয়ে রাখতেন হিরো গুয়ার্দিওলার বিশাল ছবি। গুয়ার্দিওলা জাভিকে বলেছিলেন, “তুমি আমার ছুটি করে দেবে। আর ইনিয়েস্তা আমার আর তোমার ছুটি করে দেবে।” এই ম্যাচটায় বারবার চোখে পড়ল ইনিয়েস্তার বৈচিত্র্য। রিকেলমে না থাকার সময় বার্সেলোনা কোচ ফান গাল তাঁর জায়গায় ওয়াইড ফরোয়ার্ডে খেলাতেন ইনিয়েস্তাকে। রোনাল্ডিনহো চলে যাওয়ার পরেও ওই জায়গায় কোচ রাইকার্ডের ভরসা ছিলেন ইনিয়েস্তা। ফলস উইঙ্গার, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, ডিপ লাইং মিডফিল্ডারকত পজিশনে খেলেছেন ইনিয়েস্তা। এই ম্যাচটায় তাঁর থই ধরতে পারল না আইরিশরা। দাভিদ সিলভা? তাঁকেও কি বুঝতে পেরেছিল কোনও আইরিশ?
স্পেনের কাগজ খুললেই এখন ফুটবল নয়, প্রথম পাতায় অন্য খবর। দেশটার দেউলিয়া হয়ে ওঠার আতঙ্ক। এ দিনই বেরিয়েছে, আইরিশ নেতাদের অনুসরণ করেই স্পেনের নেতারা ১০০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ নিচ্ছেন। অথচ ফুটবলে আইরিশরাই স্পেনীয়দের অনুসরণ করে বেড়াল। বলা হয়, ইতালি ও ব্রিটিশদের রক্ষণাত্মক সংগঠন সবচেয়ে ভাল। ইতালির প্রবীণতম কোচকে পেয়েও আইরিশরা ইনিয়েস্তাদের মহিমা ধরতে বা বুঝতে পারল না। দশ বছর আগের বিশ্বকাপে এই দুটো দলের ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল। মনে আছে, টাইব্রেকারে জোড়া পেনাল্টি বাঁচিয়েছিলেন স্পেনের তৃতীয় কিপার কাসিয়াস। ওই দিনের পরেই কাসিয়াসের নাম সমর্থকরা রেখেছিলেন ‘সেন্ট’। এ দিন ‘সেন্ট’ কাসিয়াস দু’মিনিটে কক্সের দুর্দান্ত শট বাঁচালেন। তার পরে অধিকাংশ সময় সন্ন্যাসীদের মতোই নির্বিকল্প দাঁড়িয়ে দেখলেন সতীর্থদের তিকিতাকা।
তিকিতাকা নামটা নাকি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন স্পেনের বদরাগি কোচ জেভিয়ার ক্লেমেন্তে। গালিগালাজের জন্য। সেই ক্লেমেন্তেউনিশ বছর আগে তাঁর কোচিংয়ে আতলেতিকো বিলবাওয়ের গোয়কোচিয়াই মারাদোনাকে মেরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলেন। গোয়কোচিয়ার নামই হয়ে যায় ‘বুচার অফ বিলবাও’। তাঁদের কোচ ক্লেমেন্তে তিকিতাকা কথাটা বলতেন, ‘ছোট পাস আর বল পজেশন’কে গালাগাল দিতে। বলেছিলেন, ওই ফুটবলে কাজের কাজ হয় না। এ দিন ৭৮% শতাংশ বল পজেশন রেখে স্পেন দেখাল, তিকিতাকার টাচ, সৃষ্টিশীলতা ও ছন্দের সম্মোহনী শক্তি। এটা ভাঙার জন্য দরকার দ্রোগবার মতো শক্তিশালী চেহারা ও প্রতিআক্রমণে দক্ষ কিছু ফুটবলার। আয়ার্ল্যান্ডের তা কোথায়? ম্যাচ শুরুর আগে ত্রাপাতোনি বড় মুখ করে বলেছিলেন, “ইতালি ঘাসে জল দিতে দেয়নি। আমরা দেব। আমাদের ভিজে মাঠে খেলতে অসুবিধা নেই।” এতে স্পেনীয়দের আরও সুবিধে হল।
জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় স্পেনের সব ফুটবলারদের মুখ দেখবেন। অধিকাংশেরই ঠোঁট নড়ে না। ইগ্লেশিয়াসের দেশের ফুটবলাররা কেউ গাইতে পছন্দ করেন না। মুখচোখে কঠিন দৃঢ়তাই দেখার। জোড়া গোল করে বেরোনর সময়ও তোরেসের মুখচোখে কী কাঠিন্য। যেন মাঠ জুড়ে হাততালির ঝড় শুনতেই পাচ্ছেন না। শুনছেন, এতদিন ধরে সমালোচনাই। বরং আগের দিন গোল করেও বাদ পড়া ফ্রাবেগাসের মুখে হাসি। পরে নেমে তীক্ষ্ম গোল করেও উচ্ছ্বাসহীন।
এই কাঠিন্য, তীক্ষ্মতা ও দৃঢ়তাই তিকিতাকার নতুন ট্রেডমার্ক! বেঁচে থাক, আরও আলো ছড়াক ফুটবলের এই রক্তগোলাপের ঝাড়।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.