|
|
|
|
বাড়ছে বিরোধিতা, খড়্গপুরে বোর্ডের কাজ প্রচারে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন সরব হয়েছে বিরোধীপক্ষ, ঠিক তখনই ঘটা করে পুরবোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পালন করতে চলেছে রেলশহরের তৃণমূল। আগামী ১৮ জুন খড়্গপুর পুরসভার সামনেই এক ‘উৎসবে’র আয়োজন করছে শহর যুব-তৃণমূল। উপস্থিত থাকবেন মৃগেন মাইতি, শ্রীকান্ত মাহাতোর মতো দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ও। ইতিমধ্যেই খড়্গপুর শহর জুড়ে ওই উৎসবের পোস্টারিংও হয়েছে। হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ, যখন প্রথম বর্ষপূর্তিতেও কোনও অনুষ্ঠান হয়নি? খড়্গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পালের জবাব, “আমাদের দলের যুব-শাখা এই কর্মসূচি নিয়েছে। পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে। তার জবাব দেওয়া প্রয়োজন।” তাঁর কথায়, “গত ১৫ বছরে কী হয়েছে (অর্থাৎ কংগ্রেস পুরবোডের্র আমলে), আর গত দু’বছরে কী কী হয়েছে, তা-ও আমরা শহরবাসীর কাছে তুলে ধরব।”
প্রসঙ্গত, তৃণমূল বোর্ডের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে কংগ্রেস খড়্গপুরে অনাস্থা আনার কথাও ভাবছে। এই অবস্থায় কংগ্রেস-আমলের থেকে ‘এগিয়ে থাকা’র দাবি তুলে ধরতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই দাবি প্রচারে শহরে পথসভাও শুরু করেছে যুব-তৃণমূল। জানা গিয়েছে, দু’বছরে কী কী কাজ হয়েছে তা জানাতে একটি পুস্তিকা প্রকাশেরও পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। |
|
রেলশহর জুড়েই চোখে পড়ছে এমন পোস্টার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
|
তৃণমূলের এই ‘উৎসব’ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীপক্ষ। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর অনিতবরন মণ্ডল বলেন, “প্রথম বছরে হয়নি। হঠাৎ দ্বিতীয় বছরে এমন উৎসব কেন বুঝতে পারছি না! পুরসভা কী ভাবে চলছে তা তো শহরের মানুষ ভালই জানেন!” একধাপ এগিয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের মন্তব্য, “আমরাও লিফলেট বিলি করে পুরসভার কাজকর্মের কথা শহরবাসীকে জানাব। কী ভাবে পুরবোর্ড দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তা মানুষের কাছে তুলে ধরব।”
২০১০-এর পুর-নির্বাচনে জিতে খড়্গপুরে পুরবোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। তার আগে একটানা ১৫ বছর পুরবোর্ড ছিল কংগ্রেসের দখলে। ২০১০-এর ১৮ জুন কংগ্রেসের সমর্থনেই পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূল। তবে, বোর্ডে যোগ দেয়নি কংগ্রেস। বোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে গত বছর সমর্থনও প্রত্যাহার করে নেয় কংগ্রেস। খড়্গপুরে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি তৃণমূলের দখলে। কংগ্রেসের হাতে ১২টি। সিপিএমের ৩, সিপিঅআইয়ের ৩, বিজেপি ১ এবং নির্দল ১। পরে অবশ্য দুই সিপিএম কাউন্সিলর দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। কংগ্রেসের শক্তি তাই এখন ১২ থেকে বেড়ে ১৪ হয়েছে। এক নির্দলের সমর্থনও তাদের দিকেই বলে দাবি কংগ্রেসের। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস অনাস্থা আনলে তৃণমূলের পক্ষে বোর্ড ধরে রাখা শক্তই। রেলশহরে আবার তৃণমূলের মধ্যেও ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে চাপ বাড়াচ্ছে সিপিএম-সিপিআইও। বামেদের অভিযোগ, পুরসভার কাজের ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই। টেন্ডার ছাড়া একের পর এক কাজ হচ্ছে। শহরবাসীর উপর ‘বোঝা’ চাপানো হয়েছে। বিভিন্ন ফর্মের দাম বাড়ানো হয়েছে। পুরকর বাড়ানো হচ্ছে। প্রায় একই বক্তব্য কংগ্রেসের। অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “গত দু’বছরে শহরের উন্নয়নে গতি এসেছে। শহরবাসীকে বিভ্রান্ত করতেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।” একধাপ এগিয়ে পুরপ্রধান-পারিষদ সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানে আসল বিরোধী তো কংগ্রেস। আমরা রাজনৈতিক ভাবেই কংগ্রেসের মোকাবিলা করব।” ‘উৎসবে’র মধ্যেও তাল ঠোকাঠুকি সমানে চলছে। |
|
|
|
|
|