বুধবার রাত থেকে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। চা বাগানের এক শ্রমিকও বুনোটির হামলায় জখম হন। বুনোটির হামলার খবর জানতেনই না রুকমন প্রসাদ। পেশায় পুরোহিত। ময়নাবাড়ি বাসিন্দা রুকমন স্ত্রী নির্মলাদেবীকে নিয়ে সকালে সাইকেল করে এলাকায় চলেও আসেন। প্রতিদিনকার মত স্থানীয় চুনিয়াঝোরা চা বাগানের শিবমন্দিরটি খুলে স্বামী-স্ত্রী মিলে পুজোর আয়োজনও করতে থাকেন। খানিকক্ষণ পরে পুজোতেও বসে পড়েন রুকমনবাবু। মন্দিরের পাশেই নির্মলাদেবী খুচরো কাজকর্ম করছিলেন। এমন সময় হামলা রুকমনবাবুকে পিছন থেকে হামলা করে চিতাবাঘটি। পুরোহিতের প্রথমে ঘাড়ে তার পরে মুখের মাংস খুবলে নেয় জন্তুটি। চিৎকার চেঁচামেচিতে মন্দিরের সামনে জড়ো হওয়া ৪-৫ ভক্ত পালিয়ে গেলেও পালাননি নির্মলাদেবী। ভয় না পেলে সোজা মন্দিরে ভিতরে গিয়ে চিতাবাঘটির দুই কান টেনে ধরে ঝটকা দেন। মানুষের হাতে এই ভাবে মার খেয়ে কার্যত ‘ভ্যাবাচ্যাকা’ খেয়ে যায় চিতাবাঘটি। মূহুর্তের মধ্যে ল্যাজ গুটিয়ে বুনোটি পালায়। তবে পালানোর আগে সেটি অবশ্য আরও তিনজনকে জখম করে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ডুয়ার্সের চুনিয়াঝোরা চা বাগানে পরপর ঘটনাটিগুলি ঘটেছে। আহত সবাইকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রাতে চা বাগানের মধ্যে ঘুমপাড়ানি গুলি চালিয়ে চিতাবাঘটিকে কাবু করেন বনকর্মীরা। তার পরে সেটিকে খাঁচাবন্দি করা হয়েছে। |
জখম পুরোহিতের স্ত্রী নির্মলাদেবী বলেন, “স্বামী চা বাগানের মন্দিরে পুজোর প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। আমি পুজোর জোগাড় করছিলাম। হঠাৎ স্বামীর চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি একটি চিতাবাঘ ওঁর উপর ঝাপিয়ে পড়েছে সবাই পালিয়ে গেলেও আমি দিকবিদিক না দেখে ছুটে গিয়ে চিতাটির দুই কান শক্ত করে ধরে ঝটকা মারি। আমি না এগোলে হয়ত ওঁকে মেরে ফেলত।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার রাতে চুনিয়াঝোড়া চা বাগানের ৫ নম্বর লাইনে বাড়ির বারান্দায় বসে থাকা জোয়াকিম ওঁরাও নামের এক চা শ্রমিককে জখম করে। এদিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা চালিয়ে পুরোহিত এবং খাইতু খড়িয়া, রটে মুন্ডা নামের চা শ্রমিকদের জখম করে। ওই শিব মন্দিরটি চা বাগানের মধ্যেই রয়েছে। পাশেই সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) ক্যাম্প। বুনোটি পালানোর সময় বিষম তোমা নামে এক এসএসবি জওয়ানকেও জখম করেছে। এর আগে বুধবরাই ফাঁসখোয়া চা বাগানে আরও দুই জনকে শ্রমিককে চিতাবাঘাটি জখম করেছে। ঘটনার পর ফাঁসখোয়া এবং চুনিয়াঝোড়া চা বাগানের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিতাবাঘটি এলাকায় লাগাতার হানা দিচ্ছে। পর পর মানুষ জখম হচ্ছে। বন দফতর বুধবার ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতলেও কাজ হয়নি। আতঙ্কে এলাকার লোকজন ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে বসে থাকছেন। চা শ্রমিকেরা ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না। খবর পেয়ে এদিন সকালে বনকর্মীদের নিয়ে চুনিয়াঝোড়া চা বাগানে যান বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) ডিএফডি জেভি ভাস্কর। তিনি বলেন, “দুই দিনে মোট ৭ জন আহত হয়েছে। সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিতাবাঘটিকে খাঁচাবন্দি করতে সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে।” |