গঙ্গায় দূষণ মাপতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ। এক জন ডেপুটি কমান্ড্যান্ট এবং এক জন ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে বাহিনীর ১২ জনের একটি দল বিশেষ জলযানে (র্যাফটিং বোট) ভেসে গঙ্গায় দূষণের নমুনা সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছেন। অভিযান শুরু হয়েছে গত ২৩ এপ্রিল গোমুখ থেকে। ৫৮ দিনের এই অভিযান শেষ হবে গঙ্গাসাগরে। এখন দলটি রয়েছে কলকাতায়। অভিযাত্রী দলটি জানায়, গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর গঙ্গাবক্ষে এই দূরত্ব ২৫২৫ কিলোমিটার।
দলটির দলনেতা ইন্দো-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ডেপুটি কমান্ড্যান্ট তরুণ কুমার বলেন, “গঙ্গাদূষণ ক্রমশই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এই দূষণ বন্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাই দেশবাসী হিসাবেই আমরা এই অভিযানে নেমেছি। দূষণের মাত্রা সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা দেওয়া হবে। গঙ্গাদূষণ রোধে দেশের সব নাগরিককে সচেতন হতে অনুরোধ করছি আমরা।” |
দিনের পর দিন পূণ্যতোয়া গঙ্গার দূষণ বাড়ছে। দূষণ রোধে আন্দোলনও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু দূষণের মাত্রা বেড়েছে বই কমেনি। বিশেষত, যে সমস্ত জায়গায় গঙ্গার ধারে কল-কারখানা রয়েছে, সেই সব জায়গায় দূষণের মাত্রা উদ্বেগেজনক বলে দূষণ প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার দাবি। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা ছড়াতে পারবে বলে দলটির আশা। অভিযাত্রীরা জানিয়েছেন, যাত্রাপথের বিভিন্ন এলাকা থেকে গঙ্গার জল এবং মাটি সংগ্রহ করছেন তাঁরা। মূলত দেশের বড় শহর থেকে এই নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। গোমুখ থেকে বেরিয়ে উত্তরাখন্ডের হৃষিকেষ হয়ে কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসি, পাটনা, ভাগলপুর, ঝাড়খন্ড, ফরাক্কায় এই নমুনা সংগ্রহের কাজ করে দলটি। বুধবার তারা পৌঁছয় হুগলির ত্রিবেণীতে। বৃহস্পতিবার পৌঁছয় কলকাতায়। পরের গন্তব্য গঙ্গাসাগর। সংগৃহীত নমুনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা দেওয়া হবে বলে দলটির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
তাঁদের কথায়, গঙ্গার দুইধারে বিভিন্ন কল-কারখানা থেকে বেরনো বর্জ্য পদার্থ, শহর থেকে নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরোনো বর্জ্য পদার্থ, পুজো-পার্বনের ফেলে দেওয়া ফুল-সহ অন্যান্য জিনিস সরাসরি গঙ্গায় পড়ে। এর ফলে, ক্রমশই বিপদ বাড়ছে এই নদীর। পাশাপাশি, মানুষের বেওয়ারিশ মৃতদেহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পশুর দেহ গঙ্গা দিয়ে ভেসে যায়। এতেও মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন হচ্ছে গঙ্গা। এই সমস্ত দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবেই এই অভিযান।
তরুণ কুমারের কথায়, “দূষণের যে চেহারা দেখলাম, তাতে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেতন না হলে, গুরুত্বপূর্ণ এই নদী বড় বিপদের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাবে।” |