|
|
|
|
গোঘাটের গ্রামে যুবককে মারধরের নালিশ, ধৃত ১ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোঘাট |
মাস তিনেক আগে এক বধূকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। গোঘাটের ঝরিয়া গ্রামের সেই ঘটনায় অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ‘চাপ’ ছিল পরিবারটির উপরে। অভিযোগ না তোলায় ওই মহিলাকে স্থানীয় স্কুলের মিড ডে মিলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তারপরেও অনমনীয় ছিলেন ওই বধূ ও তাঁর স্বামী। বৃহস্পতিবার মহিলার স্বামীকে লাঠি-রড দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল ওই দুই তৃণমূল নেতা তপন চট্টোপাধ্যায় ও নয়ন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
গোঘাট ২ ব্লকের যুব তৃণমূল নেতা শেখ ফরিদ-সহ দলেরই আরও ৬ জন মারধরে জড়িত বলেও অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে নয়নকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
ফরিদ অবশ্য দাবি করেছেন, “মহিলার স্বভাব-চরিত্র গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করছিল। মাস তিনেক আগে গ্রামের মহিলারা ওই বধূকে চড়-থাপ্পড় মেরে সতর্ক করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে উনি কুপ্রস্তাব দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে দলের নিরীহ নেতা-কর্মীদের হেনস্থা করছেন। এ দিনও গ্রামবাসীরা পুরনো মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” তৃণমূলের এক নেতা যখন এই ‘যুক্তি’ দিচ্ছেন, তখন দলেরই আর এক নেতা আতাউল হক বলেন, “ওই বধূ আমাদের দলের সমর্থক। তাঁর পরিবারের উপরে গত তিন মাস ধরে যা চলছে, তা নিন্দার। পুলিশ উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।” তা হলে কি এই ঘটনার পিছনে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ কাজ করছে? সে কথা অবশ্য মানতে চাননি আতাউল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর-সংলগ্ন গোঘাটের ঝরিয়া, বাবুরামপুর, বহড়াশোল, রামানন্দপুর, ভাতশালা প্রভৃতি গ্রামগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই ‘অপরাধপ্রবণ।’ ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে বহু। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পরে জরিমানা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে বারে বারে।
অভিযোগকারিনী ওই মহিলার বক্তব্য, “আমার স্বামী কাঠমিস্ত্রি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হয়ে আমি একটি স্কুলে রান্নার কাজ জুটিয়েছিলাম। দিনমজুরিও করি। ছ’বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে সংসার। তৃণমূলের নেতারা কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। প্রত্যাখ্যান করাতে এখন আমার চরিত্র নিয়ে কুমন্তব্যও করছেন। থানায় অভিযোগ করায় স্কুলে রান্নার কাজ করতে দেয়নি। তপন-নয়নরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য লাগাতার চাপ দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সে কারণেই স্বামীকে মারধর করল।” প্রহৃত যুবক বলেন, “স্ত্রী-পরিবার নিয়ে গ্রামে সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু ওরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। মারধরও করল।”
মূল অভিযুক্তদের মধ্যে তপন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “মহিলার স্বভাব-চরিত্র খারাপ বলেই গ্রামের লোকই রান্নার কাজ করতে দেননি। কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। তবে গ্রামের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য ওঁকে সতর্ক করেছিলাম।”
কিন্তু ‘স্বভাব-চরিত্র’ নিয়ে কাউকে এমন ‘সতর্ক’ করা বা ‘মাতব্বরি’ করার অধিকার কি আছে তৃণমূল নেতাদের? এ ব্যাপারে স্বভাবতই কোনও মন্তব্য করেননি অভিযুক্তেরা। |
|
|
|
|
|