|
|
|
|
বিপন্ন বালির পরিষেবা |
গ্রেফতারি এড়াতে ‘বেপাত্তা’ ২ পুরকর্তা |
শান্তনু ঘোষ • কলকাতা |
ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছেন পুরসভার দুই শীর্ষ কর্তা চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান। আর তারই জেরে নাগরিক-পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে বালিতে। জল সরবরাহ থেকে বাড়ির মিউটেশন, নর্দমা সাফাই থেকে পুর-ডিসপেনসারির ওষুধ কেনা সবই কার্যত বন্ধ। কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, জানা নেই কারও। চেয়ারম্যানের সই ছাড়া যে হেতু কোনও আর্থিক লেনদেন সম্ভব নয়, সেই কারণে পুরসভার জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও টাকা মঞ্জুর করা যাচ্ছে না।
বালি পুরসভা বামফ্রন্ট-পরিচালিত। কর্মীরা জানান, গত ৪ জুন থেকে পুরসভায় আসছেন না চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী ও ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ বসু। সব দফতরেরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যানের অনুমোদন লাগে। আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাঁরই হাতে। তিনি সই না-করায় সমস্ত বিল আটকে রয়েছে। আবার পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবার দায়িত্বে আছেন বিকাশবাবু। জলের চাপ কম থাকায় গ্রীষ্মে বালিতে এখন চরম জলসঙ্কট। এই সমস্যা মেটাতেও জরুরি ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
পুরকর্মীরা জানান, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় নতুন টেন্ডার-প্রক্রিয়াও বন্ধ। ফলে পুর-হাসপাতাল, ডিসপেনসারিতে ওষুধ কেনা যাচ্ছে না। চলতি মাসে এক বারও চেয়ারম্যান পারিষদদের বৈঠক হয়নি। ফলে মিউটেশন, নতুন জলের সংযোগ, ট্রেড লাইসেন্স-সহ বহু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ঠিকাকর্মীরা মজুরি পাচ্ছেন না। পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক অসিতবরণ নন্দী বলেন, “ছোটখাটো কাজ ছাড়া কিছুই করতে পারছি না।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের রেয়াজ আহমেদ বলেন, “এ সব রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৩ জুন বালিতে সিপিএম-তৃণমূলের কয়েক দফা সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ঘটনার পরেই তৃণমূলকর্মীরা বালি থানায় সিপিএমের কয়েক জন নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি, হাঙ্গামা বাধানো-সহ বহু অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের তালিকায় প্রাক্তন সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তী-সহ অরুণাভবাবু ও বিকাশবাবুর নামও রয়েছে। অরুণাভবাবু বলেন, “তৃণমূল আমায় মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। সম্মানহানি ও গ্রেফতারি এড়াতেই কার্যত পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আগাম জামিনের ব্যবস্থা না-হওয়া পর্যন্ত ফিরব না। ঘটনার দিন তো বিকাশবাবু এ রাজ্যেই ছিলেন না। তার নামও কী ভাবে জড়ালো, জানি না।” ঘটনার দিন তৃণমূলেরই কয়েক জন তাঁর ফ্ল্যাটে ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বালি ব্লকের সভাপতি তপজিল আহমেদ বলেন, “তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ওঁরা পুরসভা অচল করে দিয়ে নাগরিকদের ভুল বোঝাতে চাইছেন। ঘটনার দিন কে কী করেছে, তা মানুষ দেখেছেন।” বিকাশবাবুর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।
রাজনৈতিক এই চাপান-উতোরের ফাঁদেই আপাতত আটকে রয়েছে বালির নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য। পুরকর্মীদের আশঙ্কা, এমন অব্যবস্থা চলতে থাকলে আর কয়েক দিনের মধ্যেই কার্যত বন্ধ করে দিতে হবে বালি পুরসভা। |
|
|
|
|
|