|
|
|
|
প্রণবের ফোন বুদ্ধকে |
ইউপিএ-কে সমর্থন নিয়ে দ্বিধায় বামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করলে তাঁকে সমর্থন করার প্রশ্নে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত বাম শিবির।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘ইউপিএ প্রার্থী’-কে সমর্থনের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় কলকাতায় ফোন করেন সিপিএম পলিটব্যুরোর দুই সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিমান বসুকে। আর এক পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও কথা হয় প্রণবের। সরকারি ভাবে সিপিএমের এখনও অবস্থান হল, কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারি ভাবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম প্রস্তাব করার পরে চার বাম দল এক সঙ্গে বসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আজই দিল্লিতে সিপিআই দফতরে গিয়ে এ বি বর্ধন, সুধাকর রেড্ডি, দেবব্রত বিশ্বাসদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রকাশ কারাট। সেখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়, কংগ্রেসের নেতাকে সমর্তন করা নিয়ে সিপিএম তথা বাম শিবিরে মতভেদের বিষয়টি। তাই ঠিক হয়েছে, এখনই কোনও অবস্থান নেওয়ার থেকে আরও অপেক্ষা করা হবে। ইউপিএ এবং এনডিএ শেষ পর্যন্ত কাকে প্রার্থী করছে, তা দেখার পর ২১ জুন চার বাম দলের নেতারা বৈঠকে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কংগ্রেস শিবিরের অবশ্য আশা, প্রণববাবু বা হামিদ আনসারি যাঁকেই রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ-র প্রার্থী করা হোক, সিপিএমের সমর্থন মিলবে। বিমান-বুদ্ধ-ইয়েচুরির সঙ্গে প্রণববাবুর কথায় তেমনই ‘ইতিবাচক বার্তা’ মিলেছে বলে কংগ্রেসের শিবিরের দাবি। তবে সিপিএম শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টা এত সহজ নয়। কারণ যে কংগ্রেসের উদার আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে বামেদের লড়াই, সেই কংগ্রেসের নেতাকেই কেন সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে সিপিএম তথা বাম শিবিরে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ-র কোনও প্রার্থীকে সমর্থন না করার ব্যাপারে নিজের দলের মধ্যে তো বটেই, সিপিএমের উপরেও চাপ সৃষ্টি করছেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। তবে গুরুদাসবাবুর বক্তব্য যে দলের মত নয়, তা জানিয়ে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেন, “আমাদের দলে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। সেখানে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর ব্যাপারে আলোচনা হবে।” তবে প্রকাশ কারাটও মনে করছেন, গুরুদাসের যুক্তি নিতান্ত ফেলনা নয়। কারাটের নিজের দলেও অনেকে একই মত পোষণ করেন।
সিপিএম সূত্রের খবর, সদ্য অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সেখানে অনেকে এমন যুক্তিও দিয়েছেন, প্রয়োজনে সিপিএম তথা বামেদের ভোটদানে বিরত থাকা উচিত। কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতাদের ব্যাখ্যা, এ পি জে আব্দুল কালাম তো বটেই, এনডিএ-র কোনও প্রার্থীকেই সমর্থন করা সিপিএমের পক্ষে সম্ভব নয়।
আবার প্রণবকে ভোট দিলে প্রশ্ন উঠবে, যাঁর আর্থিক নীতির এত দিন বিরোধিতা করা হল, তাঁকেই সিপিএম সমর্থন করছে কেন? এই পরিস্থিতিতে ইউপিএ, এনডিএ কারও পক্ষে না গিয়ে ভোটদানে বিরত থাকাই শ্রেয় বলে ওই নেতারা মত দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতৃত্ব এবং পলিটব্যুরোর একাংশ অবশ্য প্রণবকে সমর্থনের পক্ষেই মত দিচ্ছেন। তাঁদের যুক্তি, এর ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের ফাটল আরও বাড়ানো যাবে। সিপিএম সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে সনিয়া গাঁধীর বাড়ি যাওয়ার আগে আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ফোন করেন প্রণববাবু। সে সময়ে সম্পাদকমণ্ডলীর ঘরে বুদ্ধবাবুর পাশে ছিলেন বিমান বসুও। তাঁর সঙ্গেও প্রণববাবুর কথা হয়। রাজ্য নেতাদের যুক্তি, ২০০৭ সালে প্রণববাবুকেই রাষ্ট্রপতি পদে চেয়েছিল সিপিএম। আজ বাক্যালাপের সময়ে প্রণববাবুকে সে কথা মনেও করিয়ে দেন বুদ্ধ-বিমান। এ বার কি প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন? জবাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেসে বলেন, “দেখা যাক কী হয়!”
পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত প্রণবকেই সমর্থন করতে হলে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে কী জবাব দেওয়া হবে? এক বাম নেতার জবাব, “তখন বলতে হবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে মনমোহন সরকারের বিরোধিতার কোনও সম্পর্ক নেই।” যদিও এই ভোটের যে ভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে, তাতে এই যুক্তি কতটা খাটবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। এ কে গোপালন ভবন তাই বলছে, প্রণবের বদলে বরং হামিদ আনসারি বা মীরা কুমারের মতো কাউকে কংগ্রেস প্রার্থী করলে বামেদের সুবিধা হতে পারে। কারণ ২০০৭ সালে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে আনসারির নাম তুলেছিল বাম দলগুলিই। আজ আবার এ বি বর্ধন ‘মহাত্মা গাঁধী দলিত মহিলাকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চেয়েছিলেন’ বলে মীরা কুমারের নাম নিয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছেন।
এখন তাই কোন পক্ষে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা দেখতে চাইছে সিপিএম তথা বামেরা। পাশাপাশি, নবীন পট্টনায়ক-জয়ললিতা-চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির নেতারা কী অবস্থান নিচ্ছেন, তা-ও দেখতে চাইছেন তাঁরা। সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন বাম-নেতারা। এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গেও আজ বর্ধনের কথা হয়েছে।
প্রণববাবুর নামে আপত্তি করলেও মমতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করায় সিপিএম বলতে পারছে না, মমতা ‘বাঙালি-বিরোধী’। তবে মমতা যে ভাবে শরিক হয়েও প্রধানমন্ত্রীর নাম টেনে এনেছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না সিপিএম সাংসদ বৃন্দা কারাট। আর বিমান বসুর কথায়, “ওঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্ক ও সমীকরণ থেকেই এ কাজ করেছেন।” |
|
|
|
|
|