দিনভর দড়ি টানাটানির কেন্দ্রে থেকে ‘নায়ক’ মুলায়মই
কাল যিনি ছিলেন চমকের কেন্দ্রে আজ তিনি কার্যত অদৃশ্য! আর সেই ‘অদৃশ্য’ মুলায়ম সিংহ যাদবকে নিয়েই আজ দিনভর দড়ি টানাটানি চলল কংগ্রেস-তৃণমূল শিবিরে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মমতার সঙ্গে তাঁর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প বাধিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ময়দানে আচমকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন মুলায়ম। রাত পোহাতেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল দড়ি টানাটানি। এক দিকে তাঁকে নিজের শিবিরে ধরে রাখতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে কংগ্রেসও দুই ‘ম’-র জোট ভেঙে তাঁকে নিজের শিবিরে টানতে চাইছে। আর এই পরিস্থিতিতে আজ গোটা দিনভর মুলায়ম যে ভাবে নীরব রইলেন, তা আখেরে ভরসা জোগাচ্ছে কংগ্রেসকে।
মমতা ও মুলয়াম গতকাল বৈঠক শেষে আব্দুল কালাম, মনমোহন সিংহ ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। চব্বিশ ঘণ্টা পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে, মমতার অবস্থানে বদল না হলেও সপা নেতৃত্ব কি তাঁদের অবস্থান বদলাচ্ছেন? বিশেষ করে আজ যে ভাবে সপা নেতা রামগোপাল যাদব দিনভর প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে মুখ খুলেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রপতি পদে পাঁচ জনই উপযুক্ত।”
এর মধ্যেই সন্ধ্যায় মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক সেরে বাইরে এসে মমতা বলেন, “আব্দুল কালামই আমাদের প্রার্থী হবেন।” মমতা মুখে এই দাবি করলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুলায়মের বাড়ি থেকে ফেরার আধ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের দুই দূতকে মুলায়মের বাড়িতে পাঠান তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য, মমতা ও মুলায়মের মধ্যে গত কাল যে রাজনৈতিক সহাবস্থান দেখা গিয়েছিল, আজ তা অনুপস্থিত ছিল। বিশেষ করে আজ মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে মমতা যে ভাবে একাই বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তাতে দুই দলের সম্পর্কে চিড় ধরেছে বলেই মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
গত সন্ধ্যার আকস্মিকতা কাটিয়ে আজ কংগ্রেস শিবিরও দিনভর মুলায়মের সঙ্গে দৌত্য চালিয়ে গিয়েছে। দলের তরফে মুলায়মকে পাশে টানার চেষ্টা শুরু হয় সকাল থেকেই। রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি শিল্প মহলের মাধ্যমেও বার্তা পাঠানো হয় মুলায়মের কাছে। এমনকী কংগ্রেসের একাংশের দাবি, খোদ প্রণববাবুও কথা বলেন মুলায়মের সঙ্গে। দুপুরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সংসদীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও ডাকেন মুলায়ম। আগামিকাল কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মুলায়মের। সেখানেই কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছে দলের বক্তব্য মুলায়ম জানিয়ে দেবেন বলে সপা সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুলায়মকে সঙ্গে পেতে ফের সিবিআইয়ের ভয় দেখানো হয়েছে। তাই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন। বিজেপি শিবির মনে করছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন মুলায়ম। কারণ যে তিনটি নাম সামনে এসেছে, তার মধ্যে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামটি মমতার অনুরোধে রাখা হয়েছিল। মনমোহনের নাম রাখা হয় যাতে কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া যায়। আর এনডিএ-র সমর্থন পাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল আব্দুল কালামের নাম। বিজেপির অভিযোগ, মুলায়ম-মমতা আলোচনা করে নাম ঠিক করলেও এখন কংগ্রেসের চাপে পিছিয়ে আসার পথে হাঁটতে চাইছে সপা শিবির।
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বারবার অবস্থান বদলের জন্য সপা’র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে বাম-বিজেপির। পরমাণু চুক্তির সময়ে যার সবথেকে বড় ভুক্তভোগী ছিল বাম-শিবির। বিজেপি নেতৃত্বও একাধিক বার সপা’র সঙ্গে জোট করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামার পরিকল্পনা নিলেও শেষ পর্যন্ত অবস্থান বদল করে কংগ্রেসকে সুযোগ করে দিয়েছেন মুলায়ম। এই অবস্থায় মুলায়ম-শিবির শেষ পর্যন্ত মমতার সঙ্গে থাকেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.