|
|
|
|
প্রণবকে চাইছেন সনিয়া, মমতা অনড় কালাম প্রশ্নে |
শঙ্খদীপ দাস ও দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামই এখনও ভাবছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। অন্য দিকে, এ পি জে আব্দুল কালামকে ফের রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনে বসাতে মরিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই টানাপোড়েনে এক দিকে যেমন ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তেমনই ফাটল দেখা দিচ্ছে শাসক জোট ইউপিএ-তে। যে ফাটলের সুযোগ নিয়ে আগামী লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলতে ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে বিজেপি তথা এনডিএ।
রাইসিনা হিলসের দৌড়ে সব চেয়ে বড় চমকটা গত কাল দিয়েছিলেন মমতা-মুলায়ম। প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নাম প্রস্তাব করে। কাল রাত পর্যন্ত কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া না আসায় জল্পনা শুরু হয়েছিল, তবে কি মনমোহনকে সরাতে এটা সনিয়ারই কৌশল। মনমোহন কিন্তু স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি এখনই সাত রেস কোর্স রোড ছাড়তে আগ্রহী নন। তার পরেই আজ সকাল থেকে আসরে নামে কংগ্রেস। সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুলায়ম সিংহ যাদব যে তিন জনের নাম প্রস্তাব করেছেন, কংগ্রেস তা খারিজ করছে।”
মমতাকে একঘরে করতেও আজ উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস। শুরু হয়েছে মমতা-মুলায়ম জুটি ভাঙার চেষ্টাও। যার জেরে আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে একটি কথাও বলেননি সমাজবাদী পার্টির প্রধান। এমনকী মমতা দূত পাঠিয়ে কালামের পক্ষে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া দেননি মুলায়ম। ফলে তৃণমূল যে খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। |
 |
সাউথ ব্লকে ক্যাবিনেট বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: পি টি আই। |
মমতা অবশ্য অনড়ই। প্রণব যে তাঁর পছন্দের প্রার্থী নন, তা আজও স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “কালামকে প্রার্থী করার জন্য আমি নৈতিক অবস্থান নিয়েছি। উনি অরাজনৈতিক ব্যক্তি। উনিই একমাত্র সেরা প্রার্থী হতে পারেন।”
কংগ্রেস অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইউপিএ-র বৈঠকেই তা জানানো হবে। কিন্তু দলীয় সূত্রে দাবি, প্রণবই যে কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন, সে ব্যাপারে গত রাতেই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কাল গভীর রাতে প্রণবকে ফোন করেছিলেন সনিয়া। তার পর আজ সকালে দশ জনপথে যান প্রণব। সনিয়া তাঁকে বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আমাদের জিততে হবে। আমি জানি সেটা আপনিই পারেন।” প্রণব বলেন, “আমার ব্যাপারে তো আমি কিছু বলতে পারি না। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আপনিই নেবেন।”
বস্তুত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে এখন মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিচ্ছে কংগ্রেস। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন প্রণব নিজেও। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি ও সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল আজই বাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সনিয়া-মুলায়ম বৈঠক করানোর জন্যও কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা এখন উঠেপড়ে লেগেছেন। মমতাকে একঘরে করার লক্ষ্যে আজ এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, ডিএমকে নেতা টি আর বালু সনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আস্থা প্রকাশ করেন। একই কথা জানান লালুপ্রসাদ, রামবিলাস পাসোয়ানরা। আর তার পরেই মমতার প্রতি কড়া বার্তা দেয় কংগ্রেস। জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নিয়ে সনিয়া গাঁধী সব শরিকের সঙ্গেই আলোচনা করছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ সেই নাম প্রকাশ করেননি। কারণ এটা হল, রাজনৈতিক মর্যাদার প্রশ্ন।” মমতার বড় সমর্থক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনিও আজ স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে জানিয়ে দেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নাম যে ভাবে টেনে আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।”
মমতাও অবশ্য চুপ করে থাকেননি। সন্ধ্যায় মুলায়মের বাসভবনে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, “আমি কোনও হুমকিতে ভয় পাই না। এ ভাবে হুমকি দিয়ে দেশ চালানো যায় না।” সেই সঙ্গে মমতা এ-ও বলেন, “আমরা তো ইউপিএ ছাড়িনি। ইউপিএ ছাড়তে বা সরকারকে ফেলতেও চাইছি না। ওরা যদি সম্পর্ক ভাঙতে চায়, তা হলে সেটা ওদের ব্যাপার।” ফলে কংগ্রেস-মমতা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়ে গেল।
ইউপিএ-তে এই ফাটলের দৃশ্যেই প্রবেশ ঘটছে বিজেপি-র। সনিয়ার প্রস্তাব করা নাম খারিজ করে মমতা-মুলায়ম তিনটি নাম ঘোষণা করার পর থেকেই বিজেপি শিবির উজ্জীবিত। গত কাল রাতেই চেন্নাই চলে যান লালকৃষ্ণ আডবাণী। আজ এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এই মুহূর্তে ব্যক্তি কালাম বিজেপি-র কাছে বড় বিষয় নয়। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ২০১৪-র নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলা। সেই জন্য বাকি কংগ্রেস-বিরোধী দলগুলিকে রাজি করানোর কাজে নেমে পড়েছে বিজেপি। যার প্রথম ধাপ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আডবাণীর বৈঠক। কারণ, জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়ক ইতিমধ্যেই পি এ সাংমাকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছেন। বস্তুত, নবীন আজও বলেছেন যে, সাংমাই তাঁদের প্রার্থী। এই অবস্থায় সাংমাকে বিরত করতে আজ তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন আডবাণী।
আসরে নেমেছেন এনডিএ শরিক জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। আজ পটনা সফরে আসা কালামকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান তিনি। কাল মধ্যাহ্নভোজে দু’জনের কথা হবে। কালামের সঙ্গে কথা বলেছেন জনতা পার্টির নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। তবে কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউপিএ কার নাম ঘোষণা করে তা দেখে বিজেপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সে জন্য কাল সকালে এনডিএ-র বৈঠকও ডাকা হয়েছে।
বিজেপি-র কৌশল সম্পর্কে কংগ্রেসও অবহিত। সেই কারণে মমতার সঙ্গে ‘সম্মুখ সমর’ সত্ত্বেও দলের তরফে বলা হচ্ছে, তৃণমূল ইউপিএ-র সম্মাননীয় শরিক। কংগ্রেসের কেউ কেউ আবার এ-ও বলছেন, মীরা কুমারের নাম সামনে রেখে মমতার সঙ্গে সমঝোতার একটা চেষ্টা হলেও হতে পারে।
তবে মমতা আপাতত কংগ্রেসকে চাপে ফেলার চেষ্টায়। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, পরোক্ষে কালামের জন্য বিজেপি তথা এনডিএ-র সমর্থন চাওয়া হচ্ছে। মমতা আজ বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধানসভা, লোকসভা নির্বাচনের মতো নয়। এই নির্বাচনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে ভাবা উচিত।” এ কথা বলে কালামের জন্য বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্র রচনা করতে চাইছেন মমতা।
অন্য দিকে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, কাল ইউপিএ-র বৈঠকের আগে সনিয়া জোটের ছোট শরিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেই কারণেই বৈঠক সকালের পরিবর্তে পিছিয়ে বিকেলে করা হয়েছে। তার মাঝে মুলায়মকে দিয়ে ইউপিএ প্রার্থীর পক্ষে ঘোষণা করানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। |
|
|
 |
|
|