প্রকাশ্যে ঘোষণাই অস্বস্তিতে ফেলে সনিয়াকে
বুধবার ১০ জনপথের বৈঠকে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতির পদের জন্য মনমোহন সিংহের নাম প্রস্তাব করেন, সনিয়া গাঁধী কিন্তু তখন সরাসরি সে প্রস্তাবে হ্যাঁ বা না, কিছুই বলেননি। বরং তিনি মমতাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনমোহন সিংহকে রাজি করাতে পারবেন কি?
ওই বৈঠকেই সনিয়া দু’টি নাম বলেছিলেন মমতাকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। সাড়ে চারটের সেই বৈঠকে মমতা আবার সনিয়াকে জানান, ইতিমধ্যেই মুলায়ম সিংহের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা তিনটি নাম চূড়ান্ত করেছেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সনিয়া প্রথমেই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামে আপত্তি জানান। কেন তিনি রাজি নন, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য সনিয়া দেননি মমতাকে। কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাজি না হওয়ার প্রধান কারণ হল, সোমনাথবাবু কংগ্রেস প্রার্থী নন। আর একটি কারণ, সোমনাথকে প্রার্থী করে বাম দলগুলিকেও চটাতে রাজি নয় কংগ্রেস। দ্বিতীয়ত, কালামের নামে সনিয়া গাঁধী ঘোরতর আপত্তি জানান। তাঁর যুক্তি ছিল, কালাম এনডিএ-র প্রার্থী। কিন্তু মমতা সনিয়াকে বোঝান, কালামকে এ ভাবে এনডিএ প্রার্থী হিসাবে দেখা উচিত নয়। কেন না, এর আগে তৃণমূল ও সপা নেতৃত্ব কালামের নাম প্রস্তাব করেছিল। কংগ্রেসও তখন তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিল।
গত কাল যে ভাবে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে মমতা কংগ্রেসের দুই প্রার্থীর নাম জানিয়েছিলেন, তা নিয়ে আজ কংগ্রেসের একাধিক নেতা অসন্তোষ জানান। যদিও তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বৈঠকের শেষে মমতা কংগ্রেস সভানেত্রীকে প্রশ্ন করেন, বাইরে যে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের কি কংগ্রেস প্রার্থীর নাম জানাব? তাতে সম্মতি দেন সনিয়া। তিনি মমতাকে দু’জনের মধ্যে প্রথমে প্রণববাবু, তার পরে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসেবে হামিদ আনসারির নাম সাংবাদিকদের জানাতে বলেন। মমতাও সনিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি কংগ্রেসের ওই দুই প্রার্থীর বিষয়ে মুলায়মের সঙ্গে আলোচনা করে ফের ১০ জনপথে আসবেন। সেখানেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
দলের কোর কমিটির বৈঠকের শেষে
বেরিয়ে যাচ্ছেন সনিয়া গাঁধী। ছবি: পিটিআই
কিন্তু তা না করে মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক শেষ হতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে তিন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেন মমতা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মুলায়মের বাড়িতে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাতে অস্বস্তিতে পড়ে যায় দল। আজ কার্যত সেই সুরেই কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অম্বিকা সোনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলেই যে ভাবে তাঁর নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তা শিষ্টাচার বিরোধী। সোনির এই বক্তব্য তথা সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্যের নির্যাস হল, যে ভাবে গত কাল প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন খোদ সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস শিবির মনে করছে, যদি প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য দুই প্রার্থীর নাম মমতা-মুলায়ম ঘোষণা করতেন, তা হলে এতটা সমস্যায় পড়তেন না সনিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর নাম রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পরেই বেশ কিছু বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম গোটা বিষয়টির মধ্যে সনিয়ার হাত রয়েছে বলে প্রচার শুরু করে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের বক্তব্য ছিল, কংগ্রেসের একাংশ মনমোহনকে সরাতে তৎপর। কিন্তু সরাসরি তা করলে বিরোধী শিবিরের আক্রমণের মুখে পড়তে হবে সনিয়া তথা ইউপিএ সরকারকে। তাই সনিয়া ঘুরপথে মমতা-মুলায়মের সাহায্যে মনমোহনকে সরানোর পরিকল্পনা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন শিবির থেকে। এমনকী, কিছু বৈদ্যুতিন সাংবাদমাধ্যম রাহুলকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করে। সনিয়া সত্যিই এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে গত রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, মনমোহন সিংহ ২০১৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এ দিন সন্ধ্যায় সনিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জানান, আগামী দু’বছর তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে। দলের কাছে তাঁর বিকল্প কোনও নেতা নেই।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তা হলে গত কাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হলে সঙ্গে সঙ্গে কেন প্রতিবাদ করেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব? তাদের সরকারি প্রতিবাদ আসতে লেগে গেল প্রায় আঠারো ঘণ্টা। আজ দুপুরে প্রথম কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বিবৃতি দেন। দলের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়, যে ভাবে মমতা কংগ্রেসের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন তাতে সনিয়া গাঁধী ক্ষুব্ধ। এখন প্রশ্ন, প্রতিক্রিয়া জানাতে এত দেরি কেন?
মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
সেই সূত্রেই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, কংগ্রেস যতই এই নিয়ে মমতা-মুলায়মের বিরোধিতা করুক, এই জুটি কিন্তু মনমোহনকে সরানোর সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছিল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে। বিশেষ করে আর্থিক মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির নিম্নমুখী হার এমন একাধিক কারণে মনমোহনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই।
দলের একটি বড় অংশ তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। সে ক্ষেত্রে মনমোহনের সম্মানজনক পুনর্বাসন হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করানোর পরিকল্পনা ছিল দলের একাংশের। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় মমতা-মুলায়ম আচমকা তড়িঘড়ি মনমোহনের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দেওয়ায়।
গোটা বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়ায় কংগ্রেস তথা সনিয়া গাঁধীর কাছে।
ওই ঘটনার জেরে গত রাতেই প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী ও পরে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রণববাবুকেই ইউপিএ-র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলে বলে জানানো হয়েছে।
গত কাল মমতা-মুলায়ম একজোট থাকলেও আজ সন্ধ্যায় কিন্তু দুই শিবিরের মধ্যে কিছুটা ভাঙনের ছবি চোখে পড়েছে। আগামিকাল সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করার কথা মুলায়মের। সপা সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে দলের সিদ্ধান্ত সনিয়াকে জানাবেন মুলায়ম। মুলায়ম এই মুহূর্তে সনিয়াকে চটাতে রাজি নন। অন্য দিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে মমতা ও সনিয়ার মধ্যে যে মতপার্থক্য তৈরি হল, তাতে দুই নেত্রীর মধ্যে সম্পর্ক এর পর কোন দিকে গড়াবে, তাতে চিড় ধরবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।
আজ কংগ্রেস শিবির সরব হলেও দিল্লির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তনের একটি চেষ্টা হয়েছিল। তবে মনমোহনকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানোর যে ‘সুযোগ’ মমতা-মুলায়ম এনে দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধীর দলের সামনে, তারা তা সদ্ব্যবহার করতে পারল না।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে
আহমেদ পটেল, ভি নারায়ণস্বামী
সনিয়ার ফোন প্রণববাবুকে

সকালে সিপিএমের কাছে কংগ্রেসের দূত।
প্রণবের ফোন বুদ্ধ-বিমানকে

সকাল ৯.৩০: ১০ জনপথে প্রণব
১০.৩০: সনিয়া ও অ্যান্টনির বৈঠক
১১টা: ইউপিএ-র
প্রার্থীকে লালু ও
রামবিলাসেরও নিঃশর্ত সমর্থন

১১টা: সনিয়ার কাছে বালু, পওয়ার।
সনিয়াতেই আস্থা দু’জনের।

১১টা: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক
১১.৩০: কারাট, এ বি বর্ধন,
দেবব্রত বিশ্বাসের বৈঠক
১২টা: মমতার বিরুদ্ধে
মর্যাদাভঙ্গের অভিযোগ কংগ্রেসের

মনমোহন সিংহকে
আমরা ছাড়তে পারি না

জনার্দন দ্বিবেদী
(কংগ্রেস মুখপাত্র)
প্রকাশ্যে
এ ভাবে প্রধানমন্ত্রীর
নাম বলাটা শিষ্টাচার বিরোধী

অম্বিকা সোনি

১২.১৫: মন্ত্রিসভার শেষে
মনমোহন-প্রণব পৃথক বৈঠক
১২.৩০: প্রণব জানালেন,
শীঘ্রই চূড়ান্ত ইউপিএ-র প্রার্থী
১.৩০: চেন্নাইতে লালকৃষ্ণ আডবাণী-
জয়ললিতা বৈঠক,
সাংমাকেও ফোন আডবাণীর
৩.১৫: তৃণমূল জানাল, সনিয়াকে বলেই
প্রণব ও আনসারির নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা
৫.২০: প্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর বৈঠক
৫.৩০: কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক
৭টা:
° মমতা-মুলায়ম বৈঠক। বেরিয়ে মমতা
বললেন, কালামই আমাদের প্রার্থী।
° জয় নিশ্চিত না হলে প্রার্থী হবেন না,
মুলায়মকে বার্তা কালামের
° সর্বসম্মত প্রার্থীর জন্য আলোচনার
দরজা খোলা, ইঙ্গিত সমাজবাদী পার্টির।
৮.৪৫:
° মমতার চিঠি নিয়ে মুলায়মের বাড়িতে দূত।
° মমতার ফোন নীতীশকে।
° আজ (শুক্রবার) ইউপিএ-র
বৈঠকে যাচ্ছেন না মমতা।

১১টা: আডবাণীর বাসভবনে এনডিএ-র বৈঠক
৪টে: প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইউপিএ-র বৈঠক




মোট ভোট: ১০,৯৮,৮৮২
জয়ের জন্য চাই: ৫,৪৯,৪৪২
ইউপিএ: ৪,৬০,১৯১
এনডিএ: ৩,০৪,৭৮৫
ইউপিএ
(তৃণমূল বাদে):
৪,১২,১৮২
বাম: ৫১,৬৮২
বিএসপি: ৪৩,৩৪৯
আরজেডি: ৮,৯৩৪
ইউপিএ
(তৃণমূল বাদে):
৪,১২,১৮২
বিএসপি: ৪৩,৩৪৯
সপা: ৬৮,৮১২
আরজেডি: ৮,৯৩৪
ইউপিএ
(তৃণমূল বাদে):
৪,১২,১৮২
বাম: ৫১,৬৮২
বিএসপি: ৪৩,৩৪৯
সপা: ৬৮,৮১২
আরজেডি: ৮,৯৩৪

এনডিএ:
৩,০৪,৭৮৫
তৃণমূল:
৪৮,০৪৯
সপা:
৬৮,৮১২
মোট: ৫,১৬,১৪৭ মোট: ৫,৩৩,২৭৭ মোট: ৫,৮৪,৯৫৯ মোট: ৪,২১,৬৪৬
এডিএমকে: ৩৬,৯২০ বিজেডি: ৩০,২১৫ তেলুগু দেশম: ২০,৫১৬
জেডিএস: ৬,১৩৮ পিডিপি: ১,৫৮৪ টিআরএস: ৩,১৯২


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.