কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ‘ক্লোজ’ করা হল কুলটি থানার আইসি-কে। একই রকম অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে আরও দুই পুলিশকর্মীকে। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুলটি থানার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে আইসি সঞ্জীব দে-কে। ওই থানা এলাকার মধ্যে পড়া চৌরঙ্গি পুলিশ পোস্টের দায়িত্বে থাকা এসআই প্রদীপ দণ্ডপাট ও কনস্টেবল রমেন দেবনাথকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার জানান, প্রদীপবাবু নিয়মিত জেনারেল ডায়েরি ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করতেন না। ডায়েরির খাতা পরীক্ষা করে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। পাশাপাশি, ওই পোস্টেরই কনস্টেবল রমেন দেবনাথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কাজে অনিয়মিত থাকেন বলে অভিযোগে। এ সবের জন্য ওই দু’জনকে
|
আইসি সঞ্জীব দে।
—নিজস্ব চিত্র। |
সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার জানান, থানা এলাকার সব পুলিশ পোস্টের যাবতীয় কাজ প্রাথমিক ভাবে নজরে রাখার কথা আইসি-র। কিন্তু চৌরঙ্গি পুলিশ পোস্টের দুই কর্মীর গাফিলতির বিষয়টি আইসি নজরে রাখেননি, এই অভিযোগে তাঁকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কমিশনারের নির্দেশে এই তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করেন এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরেই শাস্তির কথা ঘোষণা করেন কমিশনার।
সরকারি ভাবে পুলিশের তরফে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হলেও, কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার দাবি, এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবারিদের রমরমা বাড়ার জন্যই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে এই তিন পুলিশকর্মীকে। গত ৪ জুন কুলটি থানার সবনপুর এলাকায় কয়লা মাফিয়া কানাই দাসের বাড়িতে অভিযান চালাতে যায় পুলিশ। কিন্তু বাড়ির কিছুটা আগেই বেশ কিছু সশস্ত্র দুষ্কৃতী পুলিশের উপরে হামলা চালায়। জখম হন পাঁচ পুলিশকর্মী। দু’জনের আগ্নেয়াস্ত্রও ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। পরে অবশ্য সেগুলি উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিশনার-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
ঘনিষ্ঠ মহলে কমিশনার জানিয়েছিলেন, কানাই দাসের বাড়িতে অভিযানে গিয়ে যে হামলার মুখে পড়তে হবে, তা সম্ভবত স্থানীয় পুলিশের একাংশ জানতেন। পুলিশকর্তাদের মতে, রাজু ঝা, কালে সিংহ, জয়দেব মণ্ডল বা কমল দাসদের মতো বড় মাফিয়াকে গ্রেফতার করার সময়ে কোনও ঝামেলা হয়নি। কিন্তু কানাইয়ের ঠেকে অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয়। পুলিশ যে ওই রাতে কানাইয়ের ঠেকে অভিযানে যাবে, আগে থেকে জেনে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছিল বলে কমিশনারেটের একাংশের ধারনা। কুলটি এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবারিদের দাপট বেড়েছে বলে কয়েক জন ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারের কাছে কমিশনার সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলেও জানা গিয়েছে।
পুলিশের একাংশের অনুমান, এ সব কারণেই শাস্তির মুখে পড়তে হল ওই তিন জনকে। কমিশনার অজয় নন্দ অবশ্য বলেন, “কর্তব্যে কোনও গাফিলতি মানা হবে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই শাস্তি বহাল থাকবে।” |