ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহ নিগ্রহের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গড়ল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ৩ সদস্যের ওই কমিটি গড়ার কথা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কমিটিতে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাসুদেব বসু, ময়নাগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ দেব কুমার মুখোপাধ্যায়। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই কর্মচারীদের একাংশের হাতে নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে কলেজে শান্তি এবং শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক করতে শিক্ষক সমিতি এবং কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ দিন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করেন উপাচার্য। উপাচার্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে কলেজের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা এবং শিক্ষক সমিতি এ দিন থেকে তাদের বিক্ষোভ অবস্থান তুলে নেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই অধ্যক্ষ কেন ফর্ম বিলির দায়িত্ব ভাগ করেছেন তা নিয়ে কর্মচারী সমিতি যে অভিযোগ তুলেছেন তা যে যুক্তিযুক্ত নয় বৈঠকে পরিষ্কার তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কলেজের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা যে কোনও ভাবেই কাম্য নয় তা সাফ জানিয়ে দেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীর কুমার দাস বলেন, “রায়গঞ্জ ইউনির্ভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ এবং কর্মচারী সমিতির একাংশ পরষ্পরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। কেউ অভিযোগ প্রত্যাহার করলে তা তাদের নিজেদের ব্যাপার। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ যাতে বিঘ্নিত না হয় সে জন্য দু পক্ষকেই বলা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছেন, এ দিন রায়গঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহ এবং শিক্ষক সমিতির অন্যান্য প্রতিনিধিরা মিলিয়ে ৬ জন উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। উপাচার্যের কাছে যান কলেজের কর্মচারী সমিতির সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী, সভাপতি গৌরাঙ্গ কর্মকাররাও। উপাচার্য প্রথমে আলাদা ভাবে দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে উভয়পক্ষকে নিয়ে একযোগে বৈঠক করেছেন। কর্মচারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটালে তা যে নিন্দনীয় এবং কলেজের নিয়ম বিরুদ্ধ তা জানিয়ে দেন উপাচার্য। অবিলম্বে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা বিষয়টি খোঁজখবর নেবেন। কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষ কর্মচারী সমিতির লোকজন অন্যায় ভাবে দখল করে রাখার অভিযোগ পেয়েছিলেন উপাচার্য। সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শ্রেণিকক্ষ খালি করে দিতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া নিগৃহীত অধ্যক্ষ পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছিলেন কর্মচারী সমিতির সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তীও। উপাচার্য অভিযোগ তুলে নিতে বলেছেন জানিয়ে গত শনিবার সুব্রতবাবুরা শিক্ষক সমিতিকে চিঠি দেন বলে অভিযোগ। অথচ উপাচার্য অভিযোগ তোলার ব্যাপারে কোনও মন্তব্যই করেননি। বিষয়টি জানতে পেরে এ দিন শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদের ভর্ৎসনাও করেন উপাচার্য। আইন আইনের পথে চলবে বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। স্নাতক স্তরের ফর্ম বিলির দায়িত্ব ভাগ করা নিয়ে অধ্যক্ষ মর্জিমাফিক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তোলে কর্মচারী সমিতির সদস্যরা। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহকে তৃণমূল নেতা তথা কর্মচারী সমিতির সদস্য তপন নাগ, সমিতির সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী-সহ পাঁচ জন নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। শত্রুঘ্নবাবু অভিযুক্ত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। সুব্রতবাবুও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কলেজের শিক্ষক অচ্যুতমোহন রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে তাঁকে পাল্টা নিগ্রহের অভিযোগ জানান। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সোমবার থেকে কলেজে অবস্থান বিক্ষোভে বসে ওয়েবকুটা। |