ফরওয়ার্ড ব্লকের দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করলেন স্থানীয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব। সোমবার দুপুরে ভর্তির ফর্ম বিলি নিয়ে দিনহাটা কলেজে এসএফআই-ছাত্র ব্লকের সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বেণুবাদল চক্রবর্তী-সহ আরও ৩৬ জন বাম কর্মী সমর্থকও। ওই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোচবিহার জেলা সভাপতি সাবির সাহাচৌধুরী-সহ দলের ১২ কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধেও গুরুতর আঘাত করা ও ছিনতাইয়ের মামলা রুজু হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা রয়েছে। তবে পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি।
ওই ঘটনায় সাবিরবাবু সহ দু’পক্ষের অন্তত ৩০ জন জখম হয়েছেন। দিনহাটার টিএমসিপি নেত্রী দেবী রক্ষিত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, উদয়নবাবু ও বেণুবাদলবাবুর প্ররোচনাতেই এই কাণ্ড হয়েছে। |
তার ভিত্তিতেই পুলিশ খুনের চেষ্টা, মারপিট-সহ মোট ৮টি ধারায় মামলা রুজু করে বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, এসএফআই কর্মী ইয়াসিন হক সাবিরবাবু-সহ টিএমসিপি’র ১২ জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “কলেজে গোলমালের ঘটনায় দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে। যা যা অভিযোগ হয়েছে, তার ভিত্তিতে ধারা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” টিএমসিপি’র উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক বরুণ দত্ত বলেন, “উদয়নবাবু ও বেণুবাদলবাবুর প্ররোচনাতেই আমাদের জেলা সভাপতি-সহ অন্যদের ওপর হামলা চালায় বামেরা।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি গোস্বামীর অবশ্য পাল্টা দাবি, “টিএমসিপি’র জেলা সভাপতির নেতৃত্বে বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের উপরে পরিকল্পিত হামলা হয়। তাতে বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান-সহ জেলা তৃণমূল নেতাদের মদত রয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, আমরা শুধু তাঁদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আন্দোলনেও নামব।” তবে তুফানগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক অর্ঘ্যবাবু বলেন, “গোলমালের খবর পেয়ে দিনহাটায় গিয়েছিলাম। মদত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
একই দাবি করেছেন উদয়নবাবুও। তাঁর দাবি, “কলেজে গোলমালের খবর পেয়ে আগে পুলিশকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তারপরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। প্ররোচনাই যদি দেব, তা হলে পুলিশকে ফোন করতে যাব কেন?”
বেণুবাদলবাবুর বক্তব্য, গোটা রাজ্যেই বামেদের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ হচ্ছে। পুলিশের ওপর ভর করে কলেজ দখলের চেষ্টা এলাকার মানুষ বরদাস্ত করবেন না। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে মঙ্গলবার ওই গোলমালের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান হয়। বাম কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে পাল্টা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে এসএফআইও।
ওই দিনই বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজে ফর্ম তোলা নিয়ে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যে গণ্ডগোল বেধেছিল, মঙ্গলবারেও তার জের চলেছে। এক ছাত্র নেতার অনুগামীকে অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা নিগ্রহ করায় তিনি লোকজন নিয়ে কলেজে ঢোকেন বলে অভিযোগ অন্য পক্ষের। দু’পক্ষের মারপিট চলাকালীন কিছু টিএমসিপি সমর্থক আশপাশের বাড়িতেও ঢুকে পড়েন। অভিযোগ, তাঁদের তাণ্ডবে এক মহিলা-সহ দু’জন জখম হন। তাতে খেপে গিয়ে এলাকার কিছু লোক কলেজে ঢুকে তিন ছাত্রকে মারধর করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি, তবে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “টিএমসিপি’র রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল।” |