জমিহারাদের নিয়ে বৈঠক, আশ্বাস মন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
মন্ত্রীর আশ্বাস মেনে নিতে পারলেন না কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পে জমিহারাদের একাংশ। নিজেদের দাবিতে তাঁরা অনড়ই রইলেন। মঙ্গলবার ওই জমিহারাদের নিয়ে শিলিগুড়িতে দফতরে বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ওই বাসিন্দাদের তিনি বোঝান, সরকারে আসার আগে তাঁরা জমিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছেন। এখন ক্ষমতায় এসে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাবেন তা হতে পারে না। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জমিহারাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত এবং জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দেখা হবে। মন্ত্রীর ওই আশ্বাসে জমিহারাদের একাংশ ভরসা রাখলেও অপর অংশ মেনে নিতে পারছেন না। অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত এবং জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে না দিলে তাঁরা কাজ শুরু করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাঁরা অধিকাংশই পোড়াঝাড় এলাকার বাসিন্দা। বৈঠকের পর যাঁরা দফতরের সামনে এ দিন বিক্ষোভও দেখান। আজ, বুধবার থেকে তাঁরা অবস্থান আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পে জমিহারাদের সামাজিক সুরক্ষা এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পোড়াঝাড়ের জমিহারাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ১৫ দিনের মধ্যে মেটাতে অনুরোধ করেছি। বাসিন্দাদের বলেছি ভরসা রাখুন। ৩ মাস সময় দিন। যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। রাজ্যের মধ্যে কাওয়াখালিকে ‘মডেল প্রজেক্ট’ হিসাবে গড়ে তোলা হবে।” বৈঠকে জমিহারাদের তিনি জানিয়ে দেন, বুধবার থেকে প্রকল্পের এলাকায় পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হবে। ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও পাশাপাশি চলবে। কাওয়াখালি পোড়াঝাড় ভূমিরক্ষা কমিটি, টিকেবিপিসি ল্যান্ড লুজার কমিটির সদস্যরা তা মেনে নেয়। এবং প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরুর পক্ষে মত দেন। বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও কাজ শুরু পক্ষে থিকনিকাটা কাওয়াখালি ল্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও। যদিও তাদের সদস্যরা অধিকাংশ জমি দিতে অনিচ্ছুক। তবে মন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁরা আস্থাশীল। তবে যাঁরা ক্ষতিরপূরণ না মেটানো পর্যন্ত কাজ শুরুর পক্ষপাতি নন তাঁরা ‘পোড়াঝাড় ভূমিহারা ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ নামে নতুন সংগঠনও গড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ কৃষি জমি জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটির কাওয়াখালি শাখার হয়ে তাঁদের অনেকে আন্দোলনও করেছেন। ওই জমিহারাদের তরফে কার্তিক মণ্ডল বলেন, “ভূমিরক্ষা কমিটির লোকজন দালালি করছেন। জমি নেই এমন কিছু লোককে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিচ্ছেন। সেই টাকা নিজেরা ভাগ করে নেবেন। সে জন্য আগে না করলেও এখন ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার আগেই কাজ শুরুর বিষয়টি সমর্থন করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাব। ক্ষতিপূরণ না মেটানো বা অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত না মেলা পর্যন্ত আমরা কাজ করতে দেব না। প্রয়োজনে অনশন আন্দোলন শুরু করা হবে।” এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওই প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলা ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। ছিলেন এসজেডিএ’র তরফে জমিহারাদের সমস্যা ক্ষতিয়ে দেখতে যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল তার সদস্যদের একাংশ। সম্প্রতি এসজেডিএ’র উদ্যোগে প্রস্তাবিত প্রকল্পের জমিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু করা হলে বাধা দেন পোড়াঝাড় এলাকার জমিহারারা। জবরদস্তি এসজেডিএ কাজ করতে চাইছে অভিযোগ তুলে পাঁচিল দেওয়ার জন্য খোঁড়াখুড়ি করা হলে তা তাঁরা বন্ধ করেও দেন। এই পরিস্থিতিতে এ দিন এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে জমিহারাদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। জমিহারাদের পক্ষে কুড়ানু দেব সিংহের অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে অন্যান্য সমস্ত জমিহারাদের ডাকা হয়েছে। আমাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনাই হয়নি। ভূমিরক্ষা কমিটির লোকজনদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করতে চাইছেন। স্থানীয় লোকদের মধ্যে তারা সংঘর্ষ বাঁধাতে চেষ্টা করছেন।” |