জল চুরি রোধে এ বার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে রাজ্যে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সেই ধাঁচেই তৈরি করা হবে নতুন জল চুরি নিয়ন্ত্রণ আইন। বিদ্যুৎ আইনের মতো ওই আইনেও জল চুরি করলে মোটা টাকা জরিমানা কিংবা হাজতবাসের সংস্থান থাকবে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর।
ওভারহেড লাইন থেকে হুকিং বা ট্যাপিং করে সাধারণত বিদ্যুৎ চুরি করা হয়। সে রকমই নানা স্থানে পাইপ ফুটো করে জল চুরি হয় বলে জেনেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। চুরি রুখতে পারলে আরও বেশি লোককে জল সরবরাহ করা যাবে বলে মত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “একেই মানুষকে বিনা পয়সায় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তার উপরে জল চুরি হওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ওই চুরি রুখতে কড়া আইন চেয়েছি আমরা।”
কী ভাবে জল চুরি হচ্ছে তার উদাহরণ দিয়ে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় গঙ্গার জল শোধন করে তা ১২০০ কিলোমিটার লম্বা পাইপে করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গাতেই পাইপ ফুটো করে জল চুরি করে নেওয়া হচ্ছে। জল চুরি ঠেকাতে শক্ত আইন দরকার।” ওই আইন কাজে লাগিয়ে কলকাতা পুরসভাও জল চুরি বন্ধ করতে পারবে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর। পলতা-কলকাতা পাইপ লাইনের বিভিন্ন জায়গায় বহু দিন ধরেই জল চুরি হচ্ছে। কড়া আইন না-থাকায় এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না।
ভূগর্ভস্থ জল তোলায় নিয়ন্ত্রণ আনতে ২০০৫-এ ওয়েস্টবেঙ্গল গ্রাউন্ডওয়াটার রিসোর্সেস (ম্যানেজমেন্ট, কন্ট্রোল অ্যান্ড রেগুলেশন) আইন তৈরি হয়েছিল। সেই আইন গত ৭ বছরেও কার্যকর করা যায়নি। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র নলকূপ বসানো চলছেই। ওই আইন থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের জলসম্পদ দফতর ইতিমধ্যেই চাষের কাজে গভীর নলকূপের জল তোলার ব্যাপারে ঢালাও অনুমতি দিয়েছে। কলকাতা পুরসভাও নিজেদের এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর কথা ঘোষণা করেছে। কোথাও মানা হচ্ছে না আইন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জল চুরি আইন কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জলসম্পদ দফতর ২০০৫ সালে ওই আইন তৈরি করেছিল। নজরদারি ও পরিকাঠামোর অভাবেই ওই আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না বলে দফতর সূত্রের খবর। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করেই আইনটি কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তারা। |