তাদের কাজ শিশু শ্রমিকদের নিয়ে। তার মধ্যেই বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা টাকা নয়ছয় করছে বলে অভিযোগ তুললেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু নিজেই।
এই ধরনের ‘অসৎ’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী। ‘বিশ্ব শিশু শ্রমিক বিরোধী দিবস’ উপলক্ষে রাজ্যের শ্রম দফতর মঙ্গলবার শিশির মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিশু শ্রমিকদের নিয়ে হাজির ছিল। সেই অনুষ্ঠানেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন শ্রমমন্ত্রী।
পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমার কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে, নদিয়া জেলায় শিশু শ্রমিকদের নিয়ে কর্মরত বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া অর্থ নয়ছয় করছে। শুধু ওই জেলাতেই নয়, রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে, যারা শিশুদের জন্য কাজ না-করে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করছে।” বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া অভিযোগের তদন্ত করে ওই সব সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে রাজ্য। কেন্দ্রকেও এই বিষয়ে অবহিত করানো হবে বলে মন্ত্রী জানান।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি অবশ্য মন্ত্রীর তোলা দুর্নীতির অভিযোগ মানতে রাজি নয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে স্বাতী সান্যাল বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দু’-একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগেও উঠেছিল। কিন্তু তা থেকে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গায়ে ‘অসৎ’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া উচিত নয়।” অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা মৃণাল বিশ্বাস বলেন, “মন্ত্রী যখন নয়ছয়ের অভিযোগ করছেন, তখন তার নিশ্চয় একটা ভিত্তি রয়েছে। তবে যে-সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে, এই ধরনের অভিযোগে তারা মুশকিলে পড়ে যায়।”
শিশু শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ঘাটতির জন্য বিগত বাম জমানার সমালোচনা করেন পূর্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে শিশু শ্রমিকদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, লেখাপড়া শেখানোর বন্দোবস্ত-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু আগের আমলে সমন্বয়ের অভাবে সেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রূপায়িত হয়নি।”
সরকারি খাতায় সারা দেশে ৫০ লক্ষ শিশু শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে এই মুহূর্তে ঠিক কত শিশু শ্রমিক রয়েছে, শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা এ দিন তা জানাতে পারেননি। শিশু শ্রমিকদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ন্যাশনাল পলিসি অন চাইল্ড লেবার’ বা ‘এনপিসিএল’ প্রকল্প শুরু করে।
এ রাজ্যে বর্তমানে ওই প্রকল্পের আওতায় শিশু শ্রমিকদের জন্য ৯৪৫টি স্কুল চলছে বলে জানিয়েছেন শ্রম দফতরের যুগ্মসচিব মধুমিতা চৌধুরী। |