বিমানকে ফের আক্রমণ
সিপিএমের উঁচুতলা শুদ্ধ হোক, দাবি অনিল বসুর
সিপিএম থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা অনিল বসু এ বার দলের উপরতলার নেতাদের ‘শুদ্ধকরণের’ দাবি তুললেন। তাঁর তালিকায় প্রথম দু’টি নাম বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। দু’জনেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য।
বস্তুত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে অনিলবাবু প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হতে না-পারার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। একদা আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র থেকে রেকর্ড ভোটে (প্রায় ছ’লক্ষ) জয়ী প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বলেন, “১৯৯৩-এর কথা। আমি সে সময়ে রাজ্য পার্টি অফিসে ছিলাম। দিল্লি থেকে ফিরে বিমানবাবু কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে বললেন, চন্দনকে (জ্যোতিবাবুর ছেলে) দিল্লি নিয়ে গিয়ে নন্দন বানানোর শখ ঘুচিয়ে দিয়ে এসেছি! এই সব নেতারাই এখন জ্যোতিবাবুর ছবিতে মালা দেন। আর বলেন, জ্যোতিবাবুর পথই আমাদের পথ!”
মঙ্গলবার অনিলবাবুর সমর্থনে তাঁর ছবি-সহ ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে হুগলি জেলার বিভিন্ন এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নিলে দাপুটে নেতা অনিলবাবু যে এমনই ‘প্রত্যাঘাত’ ঘটাতে পারেন, সে আশঙ্কা আগেই ছিল দলের অন্দরে। যে কারণে বহু বার ‘দলবিরোধী’ কাজকর্মের অভিযোগ উঠলেও অনিলবাবুর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে এক পা এগিয়েও দু’পা পিছোতে হয়েছে সিপিএমকে। শেষ পর্যন্ত প্রথমে রাজ্যকমিটি থেকে বাদ দিয়ে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড। সেই শাস্তি চলাকালীনই সাংবাদিক বৈঠক করে বিমানবাবুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ব্যান্ডেলে অনিল বসুর সমর্থনে ফ্লেক্স। ছবি: তাপস ঘোষ।
মঙ্গলবার অনিলবাবু তাঁর চুঁচুড়ার বাড়িতে বসে বলেন, “সিপিএমের উপরতলায় শুদ্ধকরণ আশু প্রয়োজন। আগে শুদ্ধ হোন বিমান (বসু) এবং বুদ্ধবাবু। চৌত্রিশ বছর ক্ষমতা এবং সুবিধা ভোগ করে দলের উপরতলায় কংক্রিটের ব্লক তৈরি হয়ে গিয়েছে। তার ফলে দল সর্বনাশের পথে যাচ্ছে।” গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ প্রক্রিয়া হিসাবে দলে ‘শুদ্ধকরণের’ কথা বলতেন বিমান-বুদ্ধ থেকে শুরু করে দলের তাবড় নেতারা। সেই অস্ত্রকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন অনিলবাবু। তাঁর কথায়, “দলের নেতারা সব সময় পার্টির নিচুতলার শুদ্ধকরণের কথা বলেন। কিন্তু ওঁদের শুদ্ধ করবে কে?” দীর্ঘদিনের সাংসদের মতে, দলের উপরতলার নেতাদের ‘নেতৃত্বহীনতাই’ রাজ্যে সিপিএমকে ডুবিয়েছে। তাঁরা গরিব, সমাজের নিচুতলার মানুষের মন বুঝতে চাননি ‘ক্ষমতার মোহে অন্ধ’ হয়ে। অনিলবাবুর কথায়, “সিপিএমের মতো সংগঠিত শক্তিশালী দলকে মমতা (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তছনছ করে দিয়েছেন। এটা আমরা করে দেখাতে পারলাম না কেন? দলের নেতৃত্ব সঠিক সময়ে সঠিক দিশা দেখাতে পারেননি। সে জন্যই ভরাডুবি হল!” হুগলির বিভিন্ন এলাকায় এ দিন সদ্য বহিষ্কৃত নেতার ছবি-সহ বিভিন্ন ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে। সেগুলো কে বা কারা তা লাগিয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। ফ্লেক্সে ‘সিপিএম নেতা’ অনিলবাবুর প্রংশসা করা হয়েছে। অনিলবাবুর নাম উল্লেখ না-করলেও তাঁর ছবি দেওয়া ফেক্সে লেখা, ‘গণ-আন্দোলনের যে ধারার আপনি সেনাপতি, সেই ধারাকে সেলাম’।
অনিলবাবুর সমর্থনে এ দিন সিপিএমের দুই নেতা গোপাল চাকি ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। হুগলি-চুঁচুড়া ডিওয়াইএফ-এর জেলা কমিটির সদস্য গোপালবাবু বলেন, “জেলা পার্টিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনিল’দাই একমাত্র লড়তেন। রাজ্য পার্টি যে অগণতান্ত্রিক উপায়ে দল চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অনিল’দা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানোয় দল তাঁকে তাড়িয়ে দিল। এখন আমরাই বলছি, রাজা তোর কাপড় কই? আমরা বদলের লড়াইয়ের শরিক। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনও দলের সিলমোহর থাকতেই হবে, তার কোনও মানে নেই।” দীর্ঘদিনের পার্টি সদস্য শান্তনুবাবুও বলেন, “পদত্যাগ করেছি দলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। মানুষের পাশে থাকব। গরিবের পাশে থাকব। এর জন্য সব সময় কোনও দলের সিলমোহরে থাকাটা বাধ্যতামূলক নয়।” ওই দুই নেতার সিদ্ধান্তের কথা জেনে অনিলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি ওঁদের এমন করতে বারণ করেছিলাম। আমরা কমিউনিস্ট। আপত্তি থাকলে দলের ভিতরে থেকেই প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হয়।”
হুগলি সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “কেউ যেমন স্বেচ্ছায় দলে থাকেন, তেমনই স্বেচ্ছায় কেউ চলেও যেতে পারেন। তবে চলে যাওয়াটা যে খুশির, এমনটা নিশ্চয়ই বলব না।” অনিলবাবু বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করেননি সুদর্শনবাবু।
মঙ্গলবারের ঘটনাপ্রবাহ জানান দিচ্ছে, ‘ভাঙলেও’ এখনই ‘মচকাচ্ছেন’ না আরামবাগের অনিল বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.