ঠায় দাঁড়ানো বর্ষায় বিপর্যয়ের সঙ্কেত চাষের খেতেও
ত দিন মোটামুটি নিশ্চিন্তই ছিলেন ওঁরা। কিন্তু যে ভাবে গত সাত দিন ইস্তক বর্ষা একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে এ বার হিসেব-নিকেশ শুরু করতেই হচ্ছে রাজ্য কৃষি দফতরের বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহেও বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে না-পৌঁছলে আমনের চাষ পিছিয়ে যাবে। কারণ, বীজতলা বানিয়ে চারা তৈরি শুরু করার সময় ক্রমশ পেরিয়ে যাচ্ছে। এমনকী, বৃষ্টির অভাবে ‘খরার মতো’ পরিস্থিতি সৃষ্টিরও সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আবহাওয়া দফতরের নথি বলছে, জুনের প্রথম ১২ দিনেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৯%। বর্ষা আসতে যত দেরি করবে, অঙ্কটা তত বাড়বে। অর্থাৎ, বিপুল ঘাটতির বোঝা ঘাড়ে নিয়েই দক্ষিণবঙ্গে পা রাখবে মৌসুমি বায়ু। আবার দেরিতে ঢুকে বর্ষা কী আচরণ করবে, তা নিয়েও উদ্বেগে কৃষি-কর্তারা। কেননা অল্প সময়ে ঘাটতি পোষানোর অর্থ বন্যা-পরিস্থিতি। তাতেও ফসলের ক্ষতি হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা।
দক্ষিণবঙ্গে এই মুহূর্তে খেতে-খেতে সব্জি বোঝাই। কোথাও রয়েছে পাট। কৃষি-সূত্রের খবর: প্রচণ্ড গরম ও বৃষ্টির অভাবে ইতিমধ্যেই পেঁপে-বেগুন-ঝিঙে-ঢ্যাঁড়শের চাষ মার খেয়েছে। গোড়ায় জল না-থাকায় অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। জলের অভাবে পাটগাছও বাড়ছে না। উল্লেখ্য, এ বার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের অনেক কম। তাই ভূগর্ভের জলস্তর ক্রমশ নীচে নেমেছে। এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও মে’তে কালবৈশাখীর আকাল ও পরে বর্ষার বিলম্বে মাটি ফের ফুটি-ফাটা। পুকুরের জলেও টান। অগভীর নলকূপে তাই জল উঠছে না, অনেক ক্ষেত্রে গভীর নলকূপ দিয়ে উঠছে ঘোলা জল। বৃষ্টি না-হলে সেটুকুও মিলবে না বলে কৃষি-কর্তাদের আশঙ্কা।
ঠা ঠা রোদ্দুরেও কলেজে ভর্তির ফর্মের জন্য লম্বা লাইন। মঙ্গলবার মধ্যমগ্রামে সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।
চাষে সঙ্কটের ছবিটা ঠিক কী রকম?
রাজ্য কৃষি দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা সার্থক বর্মা বলেন, “বর্ষা আসতে দেরি করছে। প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিও নেই। এতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা।” কী ভাবে? অতিরিক্ত অধিকর্তার ব্যাখ্যা, “বীজতলায় ধানের চারা ২১ থেকে ২৫ দিন হলে তবেই তা মাঠে বসানো যায়। দক্ষিণবঙ্গে সাধারণত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মাঠে ধানের চারা রোয়া শুরু হয়।” এবং সেই হিসেবে এখনই বীজতলা তৈরি শুরু হওয়া জরুরি বলে জানান তিনি। কিন্তু বর্ষার বিলম্ব তাতে বাদ সাধছে। “বীজ থেকে চারা বার হওয়া আর চারার যথাযথ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত জল দরকার। বৃষ্টিই তা জোগাতে পারে। তা কই?” মন্তব্য কৃষি-কর্তার।
সুরাহা কী হতে পারে?
কৃষি-বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ: বর্ষা দেরি করলে গভীর নলকূপের জলেই বীজতলা তৈরি শুরু করে দেওয়া যায়, কারণ বীজতলা বানাতে তেমন জল লাগে না। ওঁদের যুক্তি, বীজতলা বানিয়ে বীজ ফেলে চারা একটু বড় হতে হতে ঘোর বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। ফলে তখন জলের সমস্যা থাকবে না। একই ভাবে নলকূপের জলেই আপাতত পাট চাষ করার কথা বলছেন কিছু বিশেষজ্ঞ।
কিন্তু ওই পরামর্শ মানলে যে অন্য ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সমূহ আশঙ্কা, সে সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য: গত চার মাস ধরে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কম হয়েছে। বোরো চাষে পর্যাপ্ত সেচের জল না-মেলায় মূলত পাম্প চালিয়ে ভূগর্ভের জল তুলে ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। এ অবস্থায় গভীর নলকূপ আরও চালালে বিশেষত গঙ্গার পূর্বপাড়ের জেলাগুলোয় আর্সেনিক-দূষণ চরম আকার নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বরং বৃষ্টির জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করার পক্ষপাতী।
বহু আকাঙ্খিত সেই বর্ষা কত দূর?
তার খোঁজ নিতে কৃষি-কর্তারা রোজই ফোন করছেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসে। সুখবর অবশ্য মিলছে না। মৌসুমি বায়ু মঙ্গলবারও কর্নাটক-গোয়া সীমানায় তার গত সাত দিনের অবস্থানেই স্থির। এই স্থবিরতার জন্য আবহবিদদের কেউ কেউ দায়ী করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের ‘এল নিনো’কে। কেউ আঙুল তুলছেন কাশ্মীরের পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে।
এবং বর্ষা কবে নাগাদ ঠাঁইনাড়া হয়ে পূর্ব ভারতের দিকে এগোবে, তারও কোনও নির্ঘণ্ট জানাতে পারছেন না আবহবিদেরা। উপরন্তু মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, ৫ জুন কেরলে ঢুকেই ৬ তারিখে বর্ষা যেখানে এসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেটি দক্ষিণবঙ্গের পক্ষে মোটেই অনুকূল অবস্থান নয়। ওখান থেকে সে ধাক্কা খেয়ে নড়তে শুরু করলে পশ্চিম ভারতের লাভ। বর্ষাকে পূর্ব ভারত হয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকতে হলে দরকার বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী নিম্নচাপ। তেমন পরিস্থিতি এই মুহূর্তে দূর-অস্ত্।
অতএব, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলাগুলোয় তাপপ্রবাহ চলবে। কলকাতা ও আশপাশে অস্বস্তি অবসানেরও আশু ইঙ্গিত নেই। বস্তুত দক্ষিণবঙ্গের কোথাও ভারী বর্ষণের কোনও সম্ভাবনা অনুবীক্ষণেও খুঁজে পাচ্ছে না আলিপুর।

বিলম্বিত বৃষ্টি

সাল কবে ঢুকেছে *
১৯৭৯ ২৪ জুন
২০০৫ ২৩ জুন
১৯৭২ ২২ জুন
১৯৮১ ২০ জুন
২০০৩ ১৮ জুন
২০০৭ ১৪ জুন
*দক্ষিণবঙ্গে



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.