স্মারকলিপি দিতে এসে ব্লক অফিসে তাণ্ডব চালালেন গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগের তির, দেশোয়ালি মাঝি সম্প্রদায়ভুক্ত কিছু লোকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লক অফিসের প্রতিটা ঘরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া-সহ কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে।
বিডিও দেবজিৎ বসু জানিয়েছেন, ঘটনার জেরে বহু সরকারি নথি পুড়ে গিয়েছে। প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়েছে। নীরোদ মাহাতো নামে এক ব্লককর্মী আহতও হয়েছেন। তাঁকে বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। পরে এসডিও (পুরুলিয়া পশ্চিম) শঙ্কর নস্কর, ডিএসপি (হেড কোয়াটার্স) অংশুমান সাহা ও বিশাল স্ট্রাকো বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুরুলিয়ার জেলা সুপার সি সুধাকর বলেন, “ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও অনেকের খোঁজ চলছে।” এসডিও শঙ্কর নস্কর বলেন, “স্মারকলিপি দেওয়ার নামে ওরা যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা প্রশাসন কোনও ভাবেই মেনে নেবে না।” |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সম্প্রদায়ের লোকজন প্রশাসনের কাছে বেশ কিছুদিন ধরে নিজেদের তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। জেলা জুড়ে তাঁরা বিভিন্ন ব্লক অফিসে এই নিয়ে বার কয়েক স্মারকলিপিও দিয়েছেন। সম্প্রতি এই দাবিতেই স্মারকলিপি দিতে গিয়ে মানবাজারের বিডিও-সহ অন্যান্য কর্মীদের তাঁরা সারা রাত আটকেও রেখেছিলেন। পরে এসডিও ও স্ট্রাকো বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিডিও জরুরি কাজে জেলা সদরে যাওয়ায় দফতরে ছিলেন না। ওই সম্প্রদায়ের প্রায় হাজার খানেক লোক স্মারকলিপি দিতে এসেছিলেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা দফতরে ঢুকে জানতে পারেন বিডিও নেই। তাঁরা তখন দাবি করতে থাকেন, বিডিওকেই স্মারকলিপি নিতে হবে। এই দাবিকে ঘিরেই উত্তেজনা ছড়ায়। কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। এরপরেই ওই সম্প্রদায়ের কয়েকশো মানুষ ব্লক কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। শিল্প আধিকারিক শুভঙ্কর দে, শ্রম বিভাগের কর্মী জয়ন্ত কুণ্ডু-রা বলেন, “কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।” তাঁদের অভিযোগ, “যে ভাবে ওরা হামলা চালিয়েছে তাতে আমাদের কারও বাঁচার কথা নয়।” কর্মীদের অভিযোগ, “ওরা রীতিমতো তৈরি হয়ে এসেছিল। অনেকের হাতেই টাঙ্গি-র মতো অস্ত্র ছিল। লম্বা বাঁশের ডগাতে আগুন ধরিয়ে সব কটা ঘরে আগুন লাগিয়েছে। কর্মীদের চোখে লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে বহু জরুরি নথি জ্বালিয়ে দিয়েছে।” ওই কর্মীদের কেউ প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যান, কেউ কেউ ছাদে উঠে দরজা লাগিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচান। আহত নীরোদবাবুর অভিযোগ, “ওরা কোষাধ্যক্ষ রঞ্জিত মাহাতোর স্কুটারে আগুন লাগানোর পর আমার মোটরবাইকেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিল। আমি আটকাতে গেলে আমার হাতে টাঙ্গি দিয়ে কোপ মারে।” অন্য দিকে, ওই মাঝি সম্প্রদায়ের দুই নেতা দেবেন্দ্রনাথ মাঝি ও হিরণ্ময় মাঝি-র দাবি, “আমাদের সম্প্রদায়ের এক মহিলাকে এক মহিলা কনস্টেবল লাঠি দিয়ে মারে। পুলিশই প্রথম অশান্তি পাকায়। তার থেকেই উত্তেজনা ছড়ায়।” |