স্বামী যখন ভোটে দাঁড়াতেন তখন প্রায়ই দেখা যেত তাঁকে স্বামীর হয়ে ভোট চাইতে। এখন স্বামী নেই। নেই বলেই তিনি ভোট-এর ময়দানে। ভোটের দিনটাও তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্র শুরু করলেন, স্বামী কাশীনাথ মিশ্রের পথেই। বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জে স্বামীর দলীয় অফিসের কাছে জিনাসিনি মন্দিরে গিয়ে মঙ্গলবার সাতসকালেই তিনি পুজো দিলেন। সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বুথে বুথে ঘুরলেন। ভোটারদের সঙ্গে হাসি বিনিময় করলেন। এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু তাল কেটে গেল বিকেল বেলায়।
তৃণমূলের বাঁকুড়া শহরাঞ্চলের নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে নির্বাচনের কাজে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠল। সেই অভিযোগ তুললেন মিনতিদেবীর নির্বাচনী এজেন্ট তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি ব্রজবাসী বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, “গ্রামাঞ্চলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়লেও বাঁকুড়া শহরের কিছু নেতা-নেত্রী নিষ্ক্রিয় ছিলেন। |
ওঁদের দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এর প্রভাব ফলাফলে পড়বে না।” সকালে বাঁকুড়া শহরের ১ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু তৃণমূল কর্মীকে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁদের অভিযোগ, “দলের কিছু নেতা-নেত্রী লোক দেখাতে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। তাঁরা কিন্তু নির্বাচনের দিন কর্মীদের সে ভাবে নামতে নির্দেশ দেননি।” তবে প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ ব্রজবাবুর অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “ব্রজবাবু ভ্রান্ত অভিযোগ করছেন। দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মী এই নির্বাচনে সক্রিয় ভাবে নেমেছিলেন।” মিনতিদেবী অবশ্য বলেছেন, “ব্রজবাবু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝেছেন, তাই বলেছেন। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। সবাই এগিয়ে এসেছেন বলেই, এত সুন্দর ভোট হল।”
৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাঁকুড়া এ দিন অন্য রকম ভোট দেখল। দিনভর বুথগুলিতে সে ভাবে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। দিনের শেষে জেলা প্রশাসন ঘোষণা করল, ৬৭.২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত বছর এই কেন্দ্রেই ভোট পড়েছিল ৭৯.৪ শতাংশ। রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের কর্তাদের ব্যাখ্যা, “এ বার অত্যাধিক গরমের জন্য ভোট কিছুটা কম পড়েছে।” তা ছাড়া বাতাসে আদ্রতা অত্যন্ত বেশি থাকায়, অস্বস্তিও বেজায় বেড়ে গিয়েছিল। এই গরমে এ দিন এক ভোট কর্মী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। |
অশক্ত শরীরেও হাজির বুথে। (ডান দিকে) ভোট দিতে যাওয়ার আগে
প্রয়াত স্বামীর মতোই মন্দিরে পুজো দিলেন তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্র। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপীনাথপুরে মৎস্য ভবনের বুথে ভোটকর্মী আশিসকুমার দে সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি কিছুটা সুস্থ হলে ফের কাজে যোগ দেন। সকালে কেজ্ঞাকুড়ার মোলবনা উচ্চ বিদ্যালয়ের বুথে একটি ইভিএম বিকল হয়ে যায়। এর জেরে ওই বুথে কিছু ক্ষণ ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার অরিন্দম রায় বলেন, “ওই ইভিএম-টি দ্রুত মেরামত করার পরে ফের ভোট গ্রহণ শুরু করা হয়।”
রাজনৈতিক দলগুলির অবশ্য ভোট নিয়ে বিশেষ অভিযোগ নেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “নিবিঘ্নেই নির্বাচন হয়েছে। দু’-একটি বুথে কিছু তৃণমূল কর্মী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের মধ্যে প্রচার করছিলেন। মৌখিক ভাবে রির্টানিং অফিসারকে জানিয়েছিলাম।” বিজেপি’র প্রার্থী মনীষা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আমার অভিযোগ নেই। আমাদের যে ভোট বাড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” |
ভোটের খবরা খবর নিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে আসছেন সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত। |
সকাল থেকে বাঁকুড়া শহরে বন দফতরে কার্যালয়, বাঁকুড়া গালর্স হাইস্কুল থেকে কাঞ্চনপুর হাইস্কুল, মলবোনা হাইস্কুল- কোথাও ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। বেলা যত বেড়েছে বুথগুলিতে ভোটারের সংখ্যা কমেছে। বুথের বাইরে সশস্ত্র পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানরা টহল দিচ্ছিলেন। এক জওয়ান বলেন, “এত কম ভোটার কখনও দেখিনি।” তবে এর মাঝেই অন্য ছবি দেখা গিয়েছে পুরন্দরপুর অঞ্চলের মৌকুড়া প্রাইমারি স্কুলের বুথে। অশীতপর এক বৃদ্ধা পানিমনি হাঁসদাকে পাঁজাকোলা করে বুথে নিয়ে আসেন তাঁর নাতি দুর্গাদাস হাঁসদা। সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
শুক্রবার ভোট গণনা। সবার নজর এ বার সে দিকেই।
|
মঙ্গলবার বাঁকুড়া বিধানসভাকেন্দ্রের উপনির্বাচনের ছবিগুলি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ। |