|
|
|
|
তমলুক সেই তিমিরেই |
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ তৃণমূলের পুরবোর্ড |
আনন্দ মণ্ডল • মেদিনীপুর |
দশ বছর আগে সরকারি ভাবে জুটেছে জেলা-সদরের তকমা। আর পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় দেড়শো বছর আগেই। কিন্তু শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা থেকে পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা নিয়ে তমলুক পুরসভা রয়ে গিয়েছে প্রায় গ্রামীণ-স্তরেই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের সদর দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি এলাকায় দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলেও তমলুক শহরের পুর-পরিষেবা কাঠামোর উন্নয়ন প্রায় হয়নি বলেই অভিযোগ। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পুরসভা পরিচালনায় সিংহভাগ সময় থেকেছে কংগ্রেস, অধুনা তৃণমূল। কিন্তু শহরের পরিকাঠামো উন্নয়ন কিংবা নাগরিক পরিষেবা রয়ে গিয়েছে মান্ধাতার আমলেই। চওড়া পাকা রাস্তা, উন্নত নিকাশি, সাফাই ব্যবস্থা, পরিস্রুত জল, পথবাতি, বাজার, পার্ক, সভাগৃহ, খেলার মাঠের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে পুরসভার যে-উদ্যোগ নেওয়ার কথা, তা নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে একাধিক বার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে সে-সব আর কার্যকরী হয়নি বলেই অভিযোগ। |
|
রুদ্ধগতি। পথে ও উন্নয়নে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
তমলুক পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি বড় অংশ এখনও গ্রামীণ। প্রায় ৭০ হাজার জনসংখ্যার এই শহরের বাসিন্দাদের অধিকাংশ চাকরিজীবী বা ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী এবং শ্রমজীবী। শিল্প-হীন এই শহরের নাগরিকদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত বর্গের। শহরের মূল অংশ-লাগোয়া এলাকায় ক্রমশ নতুন বসতি গড়ে উঠছে। ফলে শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনও বাড়ছে। কিন্তু তমলুক শহরের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের বৃহত্তর ও সামগ্রিক প্রকল্প রূপায়ণ হয়নি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে তূণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড গত দু’বছরে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও বিভিন্ন কাজে উদ্যোগী হওয়ার দাবি করেছে।
পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির বক্তব্য, “পুর-এলাকার মধ্যে শহরের রাধাবল্লভপুর থেকে স্টিমারঘাট হয়ে নিমতলা পর্যন্ত বাইপাস রাস্তা (৪.৫ কিলোমিটার) তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার জন্য অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে অর্ধেক টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতর। শীঘ্রই ওই কাজ শুরু হবে।” শহরের পরিকাঠামো-উন্নয়নে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে পুরপ্রধান জানান, শহরের নিকাশি খাল ও নালা সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। বুদ্ধ-পার্ক সংস্কারে ১৫ লক্ষ, বিধান-স্মৃতি উদ্যান উন্নয়নে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ৫টি কমিউনিটি সেন্টার তৈরির উদ্যোগও রয়েছে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রদ্যোৎ দে-র কিন্তু অভিযোগ, “শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশির উন্নয়নে সামগ্রিক চিন্তাভাবনা নিয়ে কোনও কাজ করছে না তৃণমূল পুরবোর্ড। এমনকী আমাদের পুরবোর্ডের উদ্যোগে যে জল-প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তার কাজ সম্পূর্ণ হওয়া নিয়েও টালবাহানা চলছে।” প্রদ্যোৎবাবুর আরও বক্তব্য, ১৫ বছর আগে সুবর্ণজয়ন্তী ভবনের কাজ শুরু করেছিল কংগ্রেস পুরবোর্ড। সেই ভবনের কাজও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। অথচ তার উদ্বোধন করেছে বর্তমান পুরবোর্ড! শহরের জেলখানা মোড় থেকে পায়রাটুঙ্গি পর্যন্ত মাতঙ্গিনী রোড দীর্ঘ দিন বেহাল। সংস্কার হয়নি। ৮ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন পল্লির পরিকাঠামোরও উন্নয়ন হয়নি। আর নতুন পুর-এলাকা রাধাবল্লভপুর, রত্নালি, নারায়ণপুর, কাপাসবেড়িয়া এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য তেমন কাজই হয়নি। প্রদ্যোৎবাবুর আরও অভিযোগ, “পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের এলাকায় যে-পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে, বাম কাউন্সিলরদের এলাকায় তার অর্ধেকও বরাদ্দ হয় না। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করছে তৃণমূল পুরবোর্ড।”
পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শহর-উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা হিসেবেই আমরা রূপনারায়ণ নদীর জল তুলে পরিস্রুত করে সরবরাহের প্রকল্প গড়ায় উদ্যোগী হয়েছি। এ ছাড়া রূপনারায়ণের ভাঙন-রোধে সেচ দফতরের কাছে দরবার করে অর্থ বরাদ্দেরও ব্যবস্থা হয়েছে।” বিরোধীদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান বলেন, “নতুন পুর-ওয়ার্ডগুলি গ্রামীণ। ওই সব ওয়ার্ডের উন্নয়নে বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কোনও সম্পর্ক নেই।”
পুরপ্রধান উন্নয়নের নানা পরিকল্পনার কথা জানালেও যতদিন না সে-সব বাস্তব হচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরের সদর-শহর হয়েও তমলুক কিন্তু সেই পিছিয়েই থাকবে। |
|
|
|
|
|