দিল্লিতে বসে ইউরোর খেলাগুলো দেখছি। রাজধানীতে দেখছি প্রচুর আগ্রহ ইউরোপের ফুটবল নিয়ে। অনেকেই জানতে চাইছেন, ইউরোর খেলা কী রকম উপভোগ করছি? প্রথম রাউন্ডের খেলা দেখার পরে অনেক ব্যাপার মাথায় ঘুরছে। তা পরপর এ ভাবে সাজানো যেতে পারে। প্রথম রাউন্ডে আমার মতে সেরা দল জার্মানি। দুইয়ে থাকবে ফ্রান্স। তার পরের তিনটি জায়গা দেব রাশিয়া, স্পেন, ইতালিকে। হ্যাঁ, স্পেনকে রাশিয়ারও পরে রাখব প্রথম রাউন্ডের বিচারে। সবচেয়ে খারাপ দল? আয়ার্ল্যান্ড।
আক্রমণাত্মক বনাম রক্ষণাত্মক: সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা অ্যাটাকিং ফুটবল দেখতে চায়। গোল দেখতেই তো এত লোক মাঠে আসে। কিন্তু ইউরোয় দুরকম ফুটবল দেখা গেল প্রথম রাউন্ডে। ইতালি, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলল। এদের মধ্যে ডেনমার্ক চমকে দিল আক্রমণাত্মক ডাচদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চেলসি মডেল যেন অনেকেরই প্রিয় হয়ে গিয়েছে। ফুটবলের জন্য এটা খুব ভাল খবর নয়।
নজরকাড়া পূর্ব ইউরোপ: ফুটবল ভক্তদের নিরাশ করেনি পূর্ব ইউরোপের দলগুলো। রাশিয়া, ইউক্রেন ও ক্রোয়েশিয়া চারটের মধ্যে তিনটি গ্রুপের শীর্ষে। ম্যাচে একাধিক গোলও করেছে তারা। আর এই দেশগুলো বল পজেশন নির্ভর ফুটবল খেলেনি। তাদের অস্ত্র ছিল প্রতি-আক্রমণ। আর সেটা খুব দ্রুত।
বল পজেশন: বল নিজেদের দখলে বেশি রাখতে গিয়ে ডুবেছে নেদারল্যান্ডস। স্পেনও বল পজেশন বেশি রেখে জিততে পারেনি। এর থেকে সেই চিরাচরিত ব্যাপারটাই প্রমাণ হয়বল পজেশন বেশি রাখলেই ম্যাচ জেতা যায় না। সেটাকে গোলে তো রূপান্তরিত করতে হবে।
ফর্মেশন: বড় টিমগুলো বেশির ভাগই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলছে। এই ছকটা ২০১০ বিশ্বকাপে খুব সফল ছিল। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে শুধু উরুগুয়ে ছাড়া সবাই মানে স্পেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এই ছকেই খেলেছিল। এ বার কিন্তু এর বিরুদ্ধে হোমওয়ার্ক করে এসেছে অন্য দলগুলো। প্রথম রাউন্ডে ইউরোয় ছকটা সফল হয়নি।
ট্যাকটিক্স: আমার খুব ভাল লাগল স্পেনের বিরুদ্ধে ইতালিকে সম্পূর্ণ অন্য একটা ট্যাকটিক্স নিতে। স্পেনের যে ফরোয়ার্ড বিহীন ছক ছিল ইতালি কোচ তার বিরুদ্ধে দলকে নামান ৩-৫-২ ছকে। যা কিছু পরে ৫-৩-২ তে বদলে যায়। পির্লো খেলল গেমমেকার হিসাবে। আর দে রোসি খেলল রক্ষণে।
ডাচ হতাশা: ফেভারিটদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস আমাকে খুব হতাশ করেছে। আমার তো মনে হয় ইগো ওদের দলে একটা বড় সমস্যা। হান্টেলার-ফান পার্সি বা রবেন-স্নাইডাররা তার আওতা থেকে না বেরোলে ডাচরা বেশি দূর এগোবে না।
ইপিএলের ক্লান্তি: ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বড়ই ক্লান্তিকর একটা লিগ। যার প্রভাব কাটিয়ে বেরোতে পারেনি ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা। এমনকী আয়ার্ল্যান্ডও। যাদের বেশির ভাগ ফুটবলারই খেলে ইপিএলে।
রোনাল্ডোর ক্ষীণ সম্ভাবনা: ইউরোয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নায়ক হওয়ার সম্ভাবনা কম। রিয়াল মাদ্রিদে ওর পাস থেকে বেঞ্জিমা গোল করে। মাঝমাঠে ওর পাশে ওজিল, দি’মারিয়া, খেদিরা, আলোন্সোর মত ফুটবলাররা খেলে। পতুর্গিজ দলে সে রকম তারকা কোথায়? এই ব্যাপারে ওর তুলনা চলে আর্জেন্তিনা জার্সিতে মেসিরও কোনও বড় ট্রফি না থাকার।
অভিজ্ঞরা সফল: তিরিশের কোটায় পৌঁছে যাওয়া তারকারা কিন্তু দারুণ রকম সফল। শেভচেঙ্কো, বুফোঁ, পির্লো, জেরারসবাই নজর কাড়ছে।
ফুটবল-১ বর্ণবৈষম্য-০: ইউরো শুরু আগে থেকেই হইচই হচ্ছিল— পোল্যান্ড-ইউক্রেনে বর্ণব্যৈষম্যের প্রকোপ খুব বেশি। কিন্তু এ ক’দিনে সে রকম খুব একটা ঘটেনি। বালোতেলির বিরুদ্ধে যেটা হয়েছে সেটা স্পেনীয় সমর্থকদের কাজ। এ জন্য অবশ্য বালোতেলিকেই দায়ী করব প্ররোচনা দেওয়ার জন্য। সব মিলিয়ে স্কোর ফুটবল-১ বর্ণবৈষম্য-০।
|
প্রথম রাউন্ডে করিমের সেরা একাদশ |
বুফোঁ, পিসজেক, হামেল, চেলিনি, লাম, জাগোয়েভ, পির্লো, ইনিয়েস্তা, নাসরি, শেভচেঙ্কো, আর্শাভিন |
|