গ্রামীণ উন্নয়নে জোর দিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুষ্ঠ রূপায়ণ চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদেরই সেই কাজে প্রবল অনীহা বলে অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন নিয়ে একের পর এক বৈঠক হয়। অথচ, সেই বৈঠকে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের হাজিরা হাতে গোনা। যদিও নিয়মিত দেখা মিলছে সিপিএম জনপ্রতিনিধিদের।
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যে প্রতিটি জেলায় ‘ডিসট্রিক্ট মনিটরিং কমিটি’ এবং ‘ভিজিল্যান্স কমিটি’ গড়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শর্তেও সেই নির্দেশ ছিল। আগের বাম আমলে ওই বৈঠক জেলাগুলিতে খুবই অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। সেই ঢিলেমিতে রাশ টানতে রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী তিন মাস অন্তর বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হুগলিতে সেই বৈঠক নিয়ম করে হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাই সেখানে নিময়মাফিক আসেন না। সোমবার ওই কমিটির বৈঠকে দলের বিধায়কদের উপস্থিতির সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যে। জেলার অর্ধেক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গড়হাজির। এই পরিস্থিতিতে হুগলি জেলায় গ্রামীণ উন্নয়নের গতি নিয়েই প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে।
হুগলিতে ডিসট্রিক্ট মনিটরিং এবং ভিজিল্যান্স কমিটির চেয়ারপার্সন সাংসদ রত্না দে নাগ এবং আহ্বায়ক জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। ওই কমিটিতে জেলার সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতিগুলির সভাপতিদের হাজির থাকার কথা। ওই বৈঠকে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা হয়। কোনও প্রকল্পের জন্য নতুন ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হবে। কোনও প্রকল্পের কাজে ঠিকাদার কোনও সমস্যা করছেন কিনা। কোনও এলাকায় স্থানীয় মানুষজনের প্রকল্পের কাজে কোনও বাধা আছে কিনা। প্রকল্পগুলির প্রতিটির কাজের খতিয়ান ওই বৈঠকে ধরে ধরে আলোচনা করা হয়।
হুগলির নতুন সার্কিট হাউসে ওই বৈঠকে সোমবার যথারীতি হাজির ছিলেন রত্না দে নাগ। কিন্তু তাঁর দলের কোনও বিধায়ক এ দিন হাজির হননি। জেলার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেন এসেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, কমিটির কোনও সদস্য হাজির না হলে বিকল্প হিসেবে প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন (নমিনি)। এখন হুগলিতে বিধায়কদের প্রতিনিধিরাই অনেক ক্ষেত্রে কাজ চালাচ্ছেন। দেখা মিলছে না বিধায়কদের। দলের বিধায়কদের অনুপস্থিতির বিষয়ে অবশ্য কমিটির চেয়ারপার্সন রত্নাদেবী মুখ খুলতে চাননি। শুধু বলেন, “কমিটির সদস্যদের প্রতিনিধিরা যথেষ্ট যোগ্য। কারণ স্থানীয় এলাকায় বহু ক্ষেত্রে তাঁরাই কাজ দেখাশোনা করেন।”
নতুন রাজ্য সরকারের বয়স এক বছর অতিক্রান্ত। অথচ ওই বৈঠকে এ পর্যন্ত হাজির হয়নি উত্তরপাড়া বিধায়ক অনুপ ঘোষাল। একই ভাবে খানাকুল ও জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক ইকবাল আহমেদ এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী বৈঠকে হাজির হয়নি। চাঁপদানির বিধায়ক মজুফর খানের হাজিরার খাতা শূন্য। জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিসবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, “বর্তমানে আমি খুবই অসুস্থ। সর্দি, জ্বর। সেই কারণেই এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারিনি।”
এই বিষয়ে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “জেলার উন্নয়নমূলক কাজের তদারকিতে তৃণমূলের বিধায়কেরা যদি মনে করেন তাঁদের প্রয়োজন নেই, প্রতিনিধিরাই যথেষ্ট তা হলে সেই কাজের ব্যাপকতা নিয়েই তাঁদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। আর সিপিএম বিধায়ক গিয়েছিলেন, কারণ উনি উন্নয়নের ধারায় অভ্যস্ত।” এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের বক্তব্য, “ওই বৈঠকে কেন দলের বিধায়কেরা গেলেন না সে বিষয়ে খোঁজ নেব।” |