টানা এক বছর স্নাতক-স্তরে অনার্স ক্লাস করার পরেও অনার্স পরীক্ষা দিতে পারছেন না হুগলির মশাটের বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী শাবানা খাতুন। কলেজ থেকে তাঁকে পাস কোর্সে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই মতোই অ্যাডমিট কার্ডের জন্য ফর্ম ফিল আপ করেছেন সাবানা।
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি?
অধ্যক্ষ সমীর সিংহের বক্তব্য, অনার্স পড়ার উপযুক্ত নম্বর পাননি শাবানা। তা সত্ত্বেও অনার্সের ফর্ম জমা করেছিলেন। প্রাথমিক ভুল তাঁরই। পরে কলেজেরও বিষয়টি ‘নজর এড়িয়ে’ যায়।
গত বছর শিয়াখালা বেণীমাধব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সাবানা ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মশাটের কলেজটিতে। কলেজ সূত্রের খবর, কলেজে পার্ট-ওয়ানের টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। সামনেই পার্ট-ওয়ান পরীক্ষা। হরিপালের প্যাটরা গ্রামের হালদার পাড়ার বাসিন্দা সাবানার অভিযোগ, “সম্প্রতি অধ্যক্ষ বলেন যে, আমি অনার্স পড়তে পারব না। উনি আমাকে সাধারণ বিভাগে (পাস কোর্স) পরীক্ষা দিতে বলেন।” সাহানার বাবা সৈয়দ আবদুল মনির কথায়, “অধ্যক্ষ বারে বারেই আমাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। কিন্তু শুধু দুঃখপ্রকাশ করে মেয়ের এত দিনের খাটনি, স্বপ্ন এগুলো কি ফেরত দিতে পারবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ?” অনার্স পরীক্ষা দিতে চেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আর্জি জানিয়েছেন সাবানা।
অধ্যক্ষ অবশ্য গোটা ঘটনার দায় চাপিয়েছেন সাহানার উপরেই। তিনি বলেন, “অনার্স পাওয়ার মতো নম্বর না পেলেও অনার্সের ফর্ম ফিল আপ করেছিলেন ওই ছাত্রী। রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিকা পাঠানো হলে বিষয়টি ধরা পড়ে। তখনই আমরা ওকে পাস কোর্সে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করি। মেয়েটি এবং তার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি আমরা মিটিয়েও নিয়েছি। মেয়েটির যদি এখনও কোনও অভিযোগ থাকে তা হলে ওরা আদালতে যেতে পারেন।” কলেজ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, অনার্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৫৫ এবং মোট ৫০ শতাংশ নম্বর পাওয়া আবশ্যিক। মেয়েটি দু’টোর কোনওটাই পাননি।
কিন্তু অনার্সে ভর্তি নেওয়ার সময় কলেজের স্ক্রুটিনিতে বিষয়টি ধরা পড়ল না কেন? অধ্যক্ষের জবাব, “কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মী নেই। পার্শ্বশিক্ষকেরাও ফর্ম জমা নেওয়ার কাজ সামলান। ভুলবশত মেয়েটির প্রাপ্ত নম্বরের বিষয়টি নজর এড়িয়ে গিয়েছে। এটা কলেজ কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত ছিল।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক ওঙ্কারসাধন অধিকারী বলেন, “ঠিক কী কারণে মেয়েটি অনার্স পরীক্ষা দিতে পারবে না, তা কাগজপত্র না দেখে বলা সম্ভব নয়। তবে, এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে পারেন। তখন নিশ্চয়ই সব খতিয়ে দেখা হবে।”
সাবানা জানান, ফর্ম ফিল আপের সময় কী হয়েছে তা তাঁর জানা নেই। কিন্তু ভুল হয়ে থাকলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আগে জানাতে পারতেন। তা হলে এমন পরিস্থিতি তৈরিই হত না। |