মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেঙ্গল প্যাকেজ’-এর দাবিকে সমর্থন জানালেও বিরোধী এনডিএ শাসিত দুই রাজ্য তাঁর দাবি আদায়ের ‘পদ্ধতি’ নিয়ে আপত্তি তুলল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই দাবির সঙ্গে ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়টি যুক্ত করে ফেলেছেন, এই অভিযোগ তুলেছেন দুই বিজেপি নেতা, বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী ও গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরীক্কর। মমতা নিজে অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী সুশীল মোদী মমতার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এই দাবি আদায়ের জন্য মমতা যে ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে বাজি ধরতে চাইছেন তা আমরা কিছুতেই সমর্থন করছি না।” সুশীল বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় কমিটিরও চেয়ারম্যান। গোয়ার সদ্যনির্বাচিত বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরীক্করের অভিমত, “বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি আমাদেরও আছে। কিন্তু মমতা যে ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেলছেন তা কাম্য নয়।” যদিও মঙ্গলবার ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীর আমন্ত্রণে দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতায়, মহাকরণে মমতা বলেন, “দু’টি বিষয়কে মোটেই মিশিয়ে ফেলিনি। তবে কোনও কোনও মহল থেকে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে, আমি জানি।” |
নিজের রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। বহু বারই এই দাবি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে বিশেষ সাড়া পাননি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বিশেষ প্যাকেজের দাবিতে ইউপিএ সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে চলেছেন মমতা। কিন্তু একটি বিশেষ রাজ্যের জন্য আলাদা করে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার দাবি মেটানো কেন্দ্রের পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে কোনও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই সব রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য হবে। তাই ইউপিএ জোট শরিক তৃণমূলের নেত্রী যে ভাবে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন তাতে পরোক্ষে খুশি বহু রাজ্যই। সুশীল বা পরীক্করের বক্তব্যেও আজ সে ইঙ্গিতও মিলেছে। সুশীলের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ প্যাকেজ পেলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা চাই বিহারের আর্থিক দাবিও মেটানো হোক।” অর্থাৎ মমতা যদি ‘বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা’ অর্থাৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্যাকেজ আদায়ের কাজটা করতে পারেন, তবে অন্য রাজ্যগুলিও শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত হবে না, বরং তাঁদের দাবি আরও জোরদার হবে।
কিন্তু এই দাবি আদায়ের সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ পদের নির্বাচনকে ‘বাজি’ হিসেবে ধরাটা তাঁরা যে সমর্থন করছেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা সুশীল মোদী। তাঁর মতে, এটা ঐতিহ্যের পরিপন্থী। মমতার নাম না করে মোদী বরং কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র সরকারের টিকে থাকার জন্য কাউকেই ব্ল্যাকমেল করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় কেন্দ্রীয় সরকারের।” পরীক্করের বক্তব্য, “গোয়ার জন্য বিশেষ মর্যাদা আমরাও চাইছি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে আর্থিক প্যাকেজের দাবিকে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়। এই ধরনের দর কষাকষিতে আমি বিশ্বাসই করি না।”
এই ধরনের দর কষাকষিতে যে তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন না, স্পষ্ট ভাবে তা জানিয়ে দিয়েই এ দিন দিল্লি গিয়েছেন মমতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুরু করেছেন রাজনৈতিক তৎপরতা। |