আন্দোলনরত এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) পাইলটদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের চাপের সামনে কিছুতেই মাথা নত করবে না এআই কর্তৃপক্ষ ও বিমান মন্ত্রক। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই ধর্মঘটী ১০১ জন পাইলটকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাকি ৩০০ পাইলটকেও প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই সম্মানজনক শর্তে কাজে ফিরতে চাইছেন পাইলটেরা। তাঁরা এখন আলোচনায় বসতে চাইলেও বিমানমন্ত্রী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইছেন তাঁরা।
বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা যে অপরিসীম গুরুত্ব আদায় করে নিয়েছেন, তা বুঝেছেন পাইলটেরাও। কলকাতা থেকে এআই-এর আন্তর্জাতিক উড়ান নেই। অথচ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের পাইলটেরা এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে। সেই কারণে, সম্প্রতি তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে। উপনির্বাচনের জন্য মুকুলবাবু এখন রাজ্যেই রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “পাইলটেরা আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। বিষয়টি অন্য মন্ত্রকের বিচারাধীন। তবু ওঁদের সমস্যার কথা শুনতে তো অসুবিধা নেই। বুধবার দিল্লি ফিরব। বলেছি তার পরে যোগাযোগ করতে।” এ দিকে, মঙ্গলবারেই দিল্লি পৌঁছেছেন মমতা। এক এআই পাইলটের কথায়, “যে কোনও ভাবে এক বার ম্যাডাম (মমতা)-এর সঙ্গে দেখা করাটা খুব দরকার। প্রয়োজনে আমরা যে কোনও দিন কলকাতায় যেতেও প্রস্তুত।”
পাইলটদের একাংশের মতে, এয়ার ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রটি সরকার বিক্রি করে দিতে চাইছে বলেই এত সব নাটক চলছে। তা করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মমতার ছাড়পত্র লাগবে। সম্প্রতি বিমানমন্ত্রী কলকাতায় এসেছিলেন। মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিদেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলতেই আগে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ করার শর্ত রেখেছেন মমতা। পাইলটদের আশা, এই অবস্থায় মমতা বললে বিমানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়ে যাবেন।
এআই পাইলটদের সংগঠন ইন্ডিয়ান পাইলট গিল্ড (আইপিজি)-এর দাবি, তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় এক্সিকিউটিভ পাইলটদের দিয়ে আন্তর্জাতিক উড়ান চালানো হচ্ছিল। এ বার তাঁরাও গিল্ড-এর সমর্থনে এক এক করে অসুস্থ হতে শুরু করেছেন।
অবশ্য কর্তৃপক্ষের এক কর্তার কথায়, “এক্সিকিউটিভ পাইলটদের কয়েক জন অসুস্থ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তা ওদের সমর্থন করার জন্য নয়। এক মাস ধরে টানা বিমান চালিয়ে ওঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।” এই অবস্থায় চুক্তি ভিত্তিক পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এআই। প্রয়োজনে বিদেশি পাইলট নিয়োগ করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখতেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, সেই কমিটির রিপোর্ট যদি বলে যে চুক্তি ভিত্তিক দেশি ও বিদেশি পাইলট দিয়ে কাজ চালানো যাবে, তা হলে গিল্ডের বাকি ৩০০ সদস্যের উপরেও খাঁড়ার ঘা নেমে আসতে পারে। সংস্থার কর্তাটির কথায়, “এক মাস ধরে ওঁরা বিমান না চালানোয় সংস্থার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থায় ছাঁটাই করে দেওয়া পাইলটদের ফিরিয়ে নিয়ে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনও যুক্তি কর্তৃপক্ষ খুঁজে পাচ্ছে না।”
পাইলটদের পাল্টা যুক্তি, কেউ তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা বুঝতে চাইছেন না। পাইলটদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরকার কথা বলতে চায়। অথচ, পাইলটদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে না। তাঁদের ছাঁটাই করে বিদেশি পাইলটদের দ্বিগুণ বেতন দিয়ে রাখলে অতিরিক্ত খরচের দায় সরকারের উপরে বর্তাবে। গত দশ বছর ধরে লক্ষ কোটি টাকা লোকসানের জন্য যে কর্তারা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ, সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স পাইলটদের বেতন বাড়িয়ে তাঁদের পদোন্নতি করে সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের কঠিন পরিস্থিতির সামনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই, বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রতিবাদে নেমেছেন। |