কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর ঘোষণা মতো অভিন্ন প্রবেশিকা, না কি বরাবরের মতো নিজস্ব জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ছাত্রভর্তি এই প্রশ্নে আপাতত বিভক্ত আইআইটিগুলি। এই প্রশ্নও উঠছে যে, আইআইটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে কেন? যদিও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, আইআইটিগুলির স্বশাসনে হস্তক্ষেপের কোনও অভিপ্রায় তাঁর নেই। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কথা ভেবেই অভিন্ন প্রবেশিকা বা ‘এক জাতি এক পরীক্ষা’ চালু করতে চান তিনি।
এখন আইআইটিগুলি নিজস্ব জয়েন্টের মাধ্যমে ছাত্রভর্তি করে। কিন্তু আইআইটি-র জয়েন্ট, রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির জন্য পৃথক জয়েন্ট, আবার ‘এআইইইই’ বিভিন্ন রকম প্রবেশিকা রাখার পক্ষপাতী নন সিব্বল। তাঁর মতে, দ্বাদশ শ্রেণির পরে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য কোনও কোনও পড়ুয়া ৫-১০’টি পরীক্ষায় বসেন। কেউ বা বসেন ৩০-৩৫টিতে। এতে তাঁদের উপরে চাপ তো পড়েই, অভিভাবকেরাও যথেষ্ট নাকাল হন। রমরমা বাড়ে কোচিং ক্লাসের। তাই অভিন্ন প্রবেশিকা চালু করতে চান তিনি।
পরীক্ষার পদ্ধতি ঠিক করতে আইআইটি, এনআইটি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গড়েন সিব্বল। কমিটির সুপারিশ, আইআইটিতে ভর্তি হতে গেলে প্রথমে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বর এবং ‘জেইই মেন’ নামে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী বাছাই হবে। ওই বাছাই করা ছাত্রছাত্রীরা এর পরে বসবেন ‘জেইই অ্যাডভান্সড’ নামে আর একটি পরীক্ষায়। শেষের ওই পরীক্ষার ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধাতালিকা তৈরি করে ছাত্র ভর্তি হবে আইআইটি-তে।
শিক্ষা সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিব্বল এখন ওয়াশিংটনে। আইআইটিগুলির আপত্তির কথা জানেন তিনিও। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর, সেখানে তিনি বলেন, “সব আইআইটি-র অধিকর্তা, এনআইটি এবং আইআইআইটি-র কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা পদ্ধতি ঠিক করেছে। এটা মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নয়। আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আইআইটি-র স্বশাসনে হস্তক্ষেপের কোনও উদ্দেশ্য আমার নেই।” একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “যে পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে, সেটা তো আইআইটি-ই নেবে। সরকার বা অন্য কেউ নয়।” |
সিব্বল যতই ঐকমত্যের কথা বলুন, অভিন্ন প্রবেশিকার সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন আইআইটি বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করছে। কানপুর আইআইটি যেমন জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছরও তারা নিজস্ব জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমেই ছাত্র ভর্তি করবে। এই প্রতিষ্ঠানের আপত্তি মূলত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নে। ইতিমধ্যেই দিল্লি আইআইটি-র প্রাক্তনী সংসদ এবং অল ইন্ডিয়া আইআইটি ফ্যাকাল্টি ফেডারেশন কেন্দ্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে।
মাদ্রাজ, গুয়াহাটি এবং খড়্গপুর আইআইটি আবার অভিন্ন প্রবেশিকার পক্ষপাতী। তবে আইআইটি খড়্গপুর ভর্তির ক্ষেত্রে এখনই উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। গত ২ মে খড়্গপুর আইআইটি-র সেনেট বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আইআইটি-জয়েন্টে ছাত্রছাত্রীদের স্থান ও দ্বাদশের পরীক্ষায় তাঁদের নম্বরের মধ্যে সঙ্গতি থাকে কি না, আগামী দু’ বছর তা খতিয়ে দেখবেন কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “ভর্তির ক্ষেত্রে বোর্ডের নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে কি না, ২০১৫-র মধ্যে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তাই আগামী দু’বছর বোর্ডের নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। তবে ২০১৩-য় অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হবে।”
ভর্তির ক্ষেত্রে দ্বাদশের পরীক্ষার নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে এত মতভেদ কেন? কিছু আইআইটি-র বক্তব্য, সারা দেশে তিরিশটিরও বেশি স্কুল বোর্ড আছে। তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ভিন্ন। আইআইটি-খড়্গপুরের শিক্ষক সংগঠন এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি পাঠিয়েছে মঙ্গলবার। সংগঠনের এক নেতা বলেন, “অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় এই রাজ্যের বোর্ডের পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা কম নম্বর পায়। ছাত্র ভর্তিতে বোর্ডের নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হলে এরা সমস্যায় পড়বে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা আমরা জানতে চাই।”
সিব্বলের গড়া বিশেষজ্ঞ কমিটির ব্যাখ্যা অবশ্য অন্য রকম। তাঁদের মতে, বোর্ডের নম্বরকে খাটো করে দেখার কোনও কারণ নেই। পরিসংখ্যান বলছে, আইআইটি জয়েন্টের পরীক্ষা সিবিএসই-র পাঠ্যক্রম-ঘেঁষা হলেও আইআইটি-তে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ৫২ শতাংশই বিভিন্ন রাজ্য বোর্ড থেকে পাশ করে আসেন। তা ছাড়া, যে পদ্ধতিতে বোর্ডের নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে (পার্সেন্টাইল), তাতে বিভিন্ন বোর্ডের তুলনা আসবে না।
সিব্বল অবশ্য জানিয়েছেন, কিছু আইআইটি কেন আপত্তি জানিয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। তাঁর কথায় “দেশে ফিরে দেখব কোথায় কোথায় আপত্তি এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” তবে ‘এক জাতি এক পরীক্ষা’ নীতি থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। |