|
|
|
|
রক্তচাপ বাড়িয়ে সেই তলানিতে শিল্পের বৃদ্ধি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যেন দুঃসংবাদের মিছিল।
বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভারত এ বার অচ্ছুত হতে পারে বলে সোমবারই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি। তার চব্বিশ ঘণ্টা না-পেরোতেই ফের দুঃসংবাদ নিয়ে হাজির শিল্পোৎপাদন সূচক। যা কিছুটা হলেও সিলমোহর দিল মূল্যায়ন সংস্থাটির আশঙ্কায়।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিলে দেশে শিল্প বৃদ্ধির হার মাত্র ০.১%। ২০১১-এর এপ্রিলে যা ছিল ৫.৩%। উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে মূলধনী পণ্যের উৎপাদনে ১৬.৩% সঙ্কোচন। কারণ, আগামী দিনে নতুন লগ্নি বা উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে শিল্পমহল কতটা আশাবাদী, তা প্রতিফলিত হয় এই পরিসংখ্যান থেকেই। দিল্লির চিন্তা বাড়িয়েছে খনিতে উৎপাদন ৩.১% কমার তথ্যও। অনেকেরই প্রশ্ন, শিল্পের এই হাল হলে, কী করে চলতি বছরে ঘুরে দাঁড়াবে ভারতের অর্থনীতি?
গত কাল এসঅ্যান্ডপি-র হুঁশিয়ারি অর্থমন্ত্রী যে ভাবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, এ দিন শিল্প নিয়ে সে পথে হাঁটেননি তিনি। বরং স্পষ্ট বলেছেন, “আমি হতাশ। শিল্প এখনও চাঙ্গা হয়নি। ইতিবাচক সঙ্কেত পাঠাতে কিছু পদক্ষেপ জরুরি।” শিল্পপতিদের আস্থা ফেরাতে চলতি মাসেই তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রক চায়, শিল্পের জন্য ঋণ সুলভ করতে আগামী ঋণনীতিতে সুদ কমাক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। উল্লেখ্য, ১৮ জুন তা পেশ করার কথা শীর্ষ ব্যাঙ্কের। |
|
সব হার শতাংশে তথ্যসূত্র: পি টি আই |
তবে এর মধ্যেও এ দিন অন্তত একটি বিষয়কে কিছুটা স্বস্তির জায়গা বলে তুলে ধরতে চেয়েছে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, আলোচ্য মাসে অন্তত সঙ্কোচনের সঙ্কট কাটিয়ে বৃদ্ধির সড়কে ফিরেছে শিল্পোৎপাদন। গত মার্চে তা সঙ্কুচিত হয়েছিল ৩.২%। সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য তুলে ধরে সাহসী মুখ দেখাতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।
তবে কেন্দ্রের এই দাবিতে আশ্বস্ত হয়নি শিল্পমহল। তারা চায়, অবিলম্বে সুদ কমুক। বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে কমানো হোক নগদ জমার অনুপাতও (শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কগুলিকে টাকার যে অংশ জমা রাখতে হয়)। সেই সঙ্গে পরিকাঠামো নির্মাণ ও আর্থিক সংস্কারে জোর দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। শিল্পমহলের দাবি, খনিতে উৎপাদন কমেছে। এই অবস্থায় কয়লা উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, নজর দিতে হবে সে দিকেও।
এ দিনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের প্রতিনিধিরা জানান, বৃদ্ধির হার বাড়াতে রাজনৈতিক সাহস দেখাতে হবে। তিন মাসের মধ্যে ছাড়পত্র দিতে হবে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে। ফিকি-র দাবি, যে সব সংস্কারে সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন নেই, অন্তত সে কাজগুলি সেরে ফেলুক কেন্দ্র। স্পষ্টতই ইঙ্গিত বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার দিকে। শিল্পকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের উৎসাহ প্রকল্প দেওয়া উচিত বলেও দাবি সিআইআইয়ের।
শিল্প-সূচক যখন নতুন সমস্যা নিয়ে হাজির, তখন আরও বেশি করে কেন্দ্রের গলার কাঁটা হয়েছে এসঅ্যান্ডপি-র হুঁশিয়ারি। প্রণববাবুর মতোই এ নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন বলেছেন, এসঅ্যান্ডপি-র আশঙ্কা অযৌক্তিক। কেন্দ্রকে চেপে ধরেছে বিজেপি ও শিল্পমহলের একাংশ। তাদের অভিযোগ, বাস্তবকে অস্বীকার করছে কেন্দ্র। তবে এ দিনও এ বিষয়ে গত কালের অবস্থানে অনড় থাকেন অর্থমন্ত্রী।
অবশ্য এসঅ্যান্ডপি-র হুঁশিয়ারি নিয়ে এই দুশ্চিন্তার মধ্যে অন্তত একটি বিষয়ে শিল্পমহলকে পাশে পেয়েছে কেন্দ্র। মার্কিন সংস্থাটির দাবি ছিল, ভারতে সংস্কার থমকে যাওয়ার অন্যতম কারণ সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহের মধ্যে দায়িত্বের ভাগ-বাঁটোয়ারা। এ দিন অ্যাসোচ্যাম প্রতিনিধিরা জানান, রাজনৈতিক দল ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য অবাঞ্ছিত। |
আমি হতাশ। আরও ইতিবাচক পদক্ষেপ করা জরুরি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় |
|
ভাবতে খারাপ লাগছে এ রকম জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।
এন আর নারায়ণমূতির্ |
|
নেতৃত্ব ছাড়াই দেশ চলছে। অবস্থা না বদলালে ডুবে যাব।
আজিম প্রেমজি |
|
পিছনে টেনে রেখেছে একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
দীপক পারেখ |
|
|
|
|
|
|