|
|
|
|
নীতির দিশা মিলল না, হতাশ শিল্পমহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে শিল্পায়ন নিয়ে কোনও স্পষ্ট দিশা দেখতে পেল না শিল্পমহল।
মঙ্গলবার ‘ফোকাস ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক বৈঠকে শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য প্রশাসন শিল্পমহলের মুখোমুখি হয়েছিল। উদ্দেশ্য জমি-সহ শিল্প নিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক নীতির ব্যাখ্যা। কারণ, শিল্পমহলের বক্তব্য হল, সরকারি নীতির টানেই বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কিন্তু এ দিনের বৈঠকের পরে কিছুটা হতাশ শিল্প কর্তাদের একাংশের মন্তব্য, নীতি নিয়ে তাঁদের ধোঁয়াশা কাটেনি।
ক্ষমতায় আসার পরেই শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দফতরের সচিব ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘কোর কমিটি’ তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি মাসে নিয়মিত বৈঠকে বসে কমিটি। শিল্পমহলের বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশ আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু সেই বৈঠকে সরকারি নীতি কী ভাবে প্রয়োগ করা হবে, তার হদিশ মেলে না।
তাই এ দিনের বৈঠক থেকে সেই দিশা পাওয়ার আশায় ছিল শিল্পমহল। তারা ভেবেছিল, গত এক বছর ধরে দফায় দফায় আলোচনার পরে এই বৈঠকে অন্তত জমির প্রশ্নে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি বলেই দাবি অধিকাংশ শিল্প কর্তার। |
|
‘ফোকাস ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্য সরকারের তরফে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে মত আদানপ্রদানের কথা বলা হয়েছিল। বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি বলেই এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য দীপনারায়ণ মিত্র। তিনি বলেন, “সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও পদ্ধতিগত ভুল হচ্ছে। মন্ত্রী ও সচিবরা সবাই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রথম থেকেই আলোচ্য বিষয়ের উপর বিধিনিষেধ জারি করে দেওয়া হয়।” প্রসঙ্গত, বৈঠকের শুরুতেই পার্থবাবু জানান, জমি অধিগ্রহণ ও বিশেষ আর্থিক অঞ্চল নিয়ে কোনও কথা হবে না। কারণ তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে এই দু’টি বিষয় নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া আছে।
তবে শুধু এ দু’টি বিষয় নয়, সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জমি সংক্রান্ত কোনও সমস্যার কথা তুললেই মন্ত্রী জানিয়েছেন, লগ্নির প্রস্তাব নিয়ে আসার পরেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এখানেই প্রশ্ন তুলেছে শিল্পমহল। মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের প্রাক্তন কর্তা সন্তোষ সরাফ বলেন, “নীতির টানেই লগ্নি আসে। সেই নীতি অস্পষ্ট হলে লগ্নি কী করে আসবে?”
শিল্পের জন্য জমির সমস্যার কথা অবশ্য মানতে নারাজ মন্ত্রী। বৈঠক শেষে পার্থবাবু বলেন, “জমির কারণে লগ্নির প্রস্তাব কখনওই আটকে থাবে না। বন্ধ কারখানায় প্রাথমিক সমীক্ষা চালিয়ে ৭৫০০ একর জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।” শিল্পমন্ত্রীর দাবি, গত এক বছরে ১৭৬টি লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। সব মিলিয়ে লগ্নির পরিমাণ এক লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
পার্থবাবু আরও বলেন, শিল্পের সুবিধার জন্যই জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত ১৪ ওয়াই ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। আরও বেশি সংখ্যক শিল্পকে ছাড়ের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁর সেই দাবিকে সমর্থন করেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়া। তাঁর কথায়, “৫০ থেকে ১০০ একর জমি কেনা লগ্নিকারীদের পক্ষে কঠিন নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই সরকার ১৪ ওয়াই সংস্কার করে সেই বাধা দূর করেছে।”
বস্তুত সঞ্জয় বুধিয়ার মতো কয়েক জন শিল্প কর্তা এ দিনের বৈঠককে শুধুমাত্র জমি জট প্রসঙ্গে আটকে রাখতে চান না। তাঁদের মতে, জমি প্রয়োজনীয় উপকরণ ঠিক। কিন্তু শিল্পায়নের পরিপ্রেক্ষিতটা আরও বড়। বুধিয়ার কথায়, “এ ধরনের বৈঠক ডাকার সদিচ্ছাই বড় কথা।”
শিল্পমহলের একটা বড় অংশ অবশ্য সরকারকে এত দরাজ সার্টিফিকেট দিতে রাজি নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতির মন্তব্য, “বৈঠক সম্ভাবনাময় হয়েই থেকে গেল। নতুন কোনও দিশা দেখাতে পারল না ‘ফোকাস ওয়েস্ট বেঙ্গল’।” |
|
|
|
|
|