নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
গরমে আদালতে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে এই যুক্তিতে ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন গত ৬ জুন পাঁচদিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছিল বার অ্যাসোসিয়েশনও। টানা পাঁচদিন ধরে আদালতের সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ থাকার পর, সেই কর্মবিরতি আরও তিনদিন বাড়ানোর (১৩ জুন পর্যন্ত) সিদ্ধান্ত নিয়েছে ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে, বার অ্যাসোসিয়েশন সেই কর্মবিরতি ১৭ জুন পর্যন্ত চালানোর কথা ঘোষণা করেছে। ফলে সব মিলিয়ে কর্মবিরতির জেরে টানা ১২ দিন বন্ধ থাকছে বোলপুর আদালতের যাবতীয় কাজকর্ম। ফলে ভুগতে হচ্ছে এই গরমে দূর দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের।
কিন্তু কেন এই কর্মবিরতি? বোলপুর ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মনোরঞ্জন দাস ও বিপিন মির্ধা বলেন, “আদালত চত্বরে যেমন বিচারপ্রার্থীদের বসার কোনও জায়গা নেই, তেমনই ল’ক্লার্কদের জন্য বসে কাজ করারও কোনও জায়গা নেই। প্রচণ্ড দাবদাহে বাইরে কাজ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তাঁদের আরও দাবি, “এখানে পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বহু দূর-দূরান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা এসে প্রচণ্ড গরমে সামান্য জলটুকুও পান না।” তাই সার্বিক সমস্যার সমাধানের আর্জিতেই তাঁরা আদালতে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমস্যার কথা স্বীকার করে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে বোলপুর বার অ্যাসোসিয়েশনও। বোলপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবকুমার দত্ত ও সম্পাদক তপনকুমার দে বলেন, “ল’র্ক্লাক সংগঠন বুধবার পর্যন্ত কর্মবিরতি চালানোর কথা জানিয়েছিল। সমস্যার কথা বুঝে আমরা জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী রবিবার পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে।”
লাভপুর থানার গঙ্গারামপুর থেকে এসেছেন দিলশাদ হোসেন। জমি সংক্রান্ত মামলায় গত ১০ বছর ধরে আদালতে আসতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে বসার জায়গা ও জল না থাকায় ক্ষোভ জানালেন তিনিও। তবে একই সঙ্গে তাঁর মত, “একটা কিছু সমাধান হওয়া দরকার। তা না হলে বিচার না পেয়ে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।” গরমে কোথাও বসতে না পেয়ে এ দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন ইলামবাজার থানা এলাকার গোলটিপুরীর বাসিন্দা আবদুর রহমান। জল না পেয়ে তার দিকে কেউ তা এগিয়ে দিতে পারছিলেন না। একটু সুস্থ হয়ে জানালেন, একটি ফৌজদারি মামলার শুনানির দিন থাকায় খোঁজ নিতে এসেছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “একদিকে গরমে কাহিল হয়ে পড়ছি। অন্যদিকে, মামলার জন্য এসেও কিছু হচ্ছে না। কর্মবিরতির জন্য চরম হয়রানি হচ্ছে।” এঁদের মতো অনেক বিচারপ্রার্থীকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। অভিযুক্তদের অভিযোগের ধারা, কোন সংশোধনাগারে থাকবে কিংবা জামিনের আর্জি সংক্রান্ত সমস্ত মামলাই পিছিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য আদালতের মতো কি এখানে সকালবেলা কাজ চালানো যায় না? বোলপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবকুমারবাবুর যু্ক্তি, “সকাল সাড়ে ৬টায় বিচারপ্রার্থীদের দূর-দূরান্ত থেকে আসা কার্যত অসম্ভব কাজ। তাতে ভোগান্তি আরও বাড়বে। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা দরকার।” কিন্তু সেই বিকল্প ব্যবস্থাটি কী, বলতে পারছেন না কেউই। ফলে আপাতত ভুগতে হচ্ছে বোলপুর আদালতের বিচারপ্রার্থীদের। |