মুড়ি ভেজেই আজমিরাকে পড়ানোর স্বপ্ন দেখেন মা
ভাব অনটনের সংসারে দারিদ্র তাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে ওরা। ওরা কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, আবার কেউ অনগ্রসর শ্রেণির। খেতমজুরি করে পেট চালিয়ে অভাবের সংসারে বাবা-মার পাশে থেকেছে। বই পড়তে হয়েছে চেয়েচিন্তে জোগাড় করে। কোনও কিছুই কিন্তু তাদের দমাতে পারেনি। এই আকালে ওরা আমাদের স্বপ্ন দেখায়।
নানুর থানার নাহিনা গ্রামের বিউটি খাতুন বোলপুরের বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। পাঁচ সদস্যের পরিবারে বাবা শেখ হাকিম সামান্য খেত মজুর। মাধ্যমিকের পর বড় মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে পারেননি। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বরাবর পড়াশোনায় ভাল ছোট মেয়ে বিউটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে গোটা পরিবার। মাধ্যমিকে ৬৩০ নম্বর পেয়েছিল। ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। বাবা সে খরচ যোগাতে পারবেন না বুঝে নিজেই সে ইচ্ছে ছেড়ে ভর্তি হয়েছিল কলা বিভাগে। পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, সেই বিউটি এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪১ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। রাতে এক চিলতে প্রদীপের আলোতেই তার পড়াশোনা। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে বিউটির এই ফল উজ্জ্বীবিত করছে গোটা গ্রামকে।
দিলীপ সরেন। আজমিরা খাতুন। বিউটি খাতুন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমাপ্রসাদ মল্লিক বলেন, “বিউটির এই সাফল্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। সবার সাহায্য পেলে ভবিষ্যতে সে আরও উন্নতি করবে।” ভবিষ্যতে ইংরাজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বিউটি। তার উচ্চ শিক্ষার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে এখন সেটাই চিন্তা তার খেতমজুর বাবার।
ইংরাজি নিয়ে পড়তে চাই ইলামবাজারের কানুড় গ্রামের আজমিরা খাতুনও। কিন্তু বিপিএল পরিবারের এই মেয়ে জানে তাকে ভবিষ্যতে কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে। আর্থিক অনটনে রোগে ভুগে প্রায় বিনা চিকিৎসায় তার বাবা মারা গিয়েছেন। সেই আট বছর বয়স থেকে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে আজমিরা। সেই লড়াইয়ের ফল উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩৭ নম্বর। মা নাজমা বিবি মুড়ি ভেজে সংসার চালান। মাকে কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি ছোট বোন আসমিনাকে নিয়ে তিন সদস্যের পরিবার। আজমিরাও তার পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারকে স্বনির্ভর করায় এখন তার অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে প্রতিবন্ধক তার আর্থিক অবস্থা। মেধার জোরে যা সে এতদিন কাটিয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় সেই প্রতিবন্ধকতা কি আজমিরা কাটিয়ে উঠতে পারবে? জেদ বাড়ছে তার মায়ের। জেদ বাড়ছে আজমিরারও।
অন্যদিকে, রাইপুর স্মৃতিকণ্ঠ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র দিলীপ সরেনের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৩৭৬। বোলপুরের কাঁকুটিয়া কাটাবাগানের বাসিন্দা দিলীপের বাবা খেত মজুর। বাবার সঙ্গেই সে মাঠে মজুরি খাটতে যায়। মজুরির টাকায় সংসারকে কিছু দেওয়ার পর বাকিটা নিজের পড়ার খরচের জন্য সঞ্চয় করে। এক দিদি আর বাবা-মাকে নিয়ে চার সদস্যের সংসারের জন্য সেই আয় এমন কিছু আহামরি নয়। কিন্তু অভাবী সংসারের এই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায়। এতদিন পরিচিত শিক্ষকদের কাছ থেকে বইপত্র জোগাড় করে পড়াশোনা চালিয়েছে। কিন্তু আগামী দিনের দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েও দিলীপের দৃঢ় সঙ্কল্প, একদিন সে ঠিক তার স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলবে।

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
প্রতিবেদক: মহেন্দ্র জেনা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.