কৃষ্ণনগরে মিলল খোঁজ
টিউশনের পড়া হয়নি, বকুনির ভয়ে বাড়িছাড়া
প্রাইভেট টিউটরের দেওয়া পড়া তৈরি হয়নি। পড়তে না গেলে বাড়িতে জুটবে ধমক। টিউশনে গিয়ে পড়া বলতে না পারলে বকাবকি করবেন শিক্ষক। এই উভয়সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচতে নদিয়ার শান্তিপুরে পিসির বাড়ি পালিয়ে যেতে চেয়েছিল বছর দশেকের বালক। পথ হারিয়ে পৌঁছে যায় কৃষ্ণনগরে। মঙ্গলবার সেখান থেকে কালনার ওই স্কুলছাত্রকে পুলিশ উদ্ধার করার পরে এমনটাই দাবি করেছে সে।
কালনা ১ ব্লকের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভক্ত ঘোষের বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস নীলকান্ত সর্দারের। নদিয়ার বাগডোব এলাকার বাসিন্দা নীলকান্তবাবু চাষবাস-সহ ঘোষ পরিবারের নানা কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। তাঁর দুই ছেলে। ছোট প্রাণগোবিন্দ স্থানীয় গোপালপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রাণগোবিন্দ নিখোঁজ হয়ে যায়। সকাল ৬টা নাগাদ টিউশন যাওয়ার কথা ছিল। বাড়ির লোকজন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, প্রাণগোবিন্দ সেখানেও যায়নি। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও হদিস পাননি বাড়ির লোকজন। কালনা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা।
বাবার সঙ্গে প্রাণগোবিন্দ। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার দুপুরে নীলকান্তবাবুরা খবর পান কৃষ্ণনগরের রাউতারা গ্রামে মহাদেব সর্দার নামে এক যুবকের বাড়িতে রয়েছে প্রাণগোবিন্দ। কালনা থানার পুলিশ ও বাড়ির লোকজন রাউতারা গ্রামে যান। এ দিন বিকেলে সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, প্রাণগোবিন্দ তাদের জানিয়েছে, পড়া তৈরি না করার জন্য ভয়ে রবিবার ভোরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। লক্ষ্য ছিল শান্তিপুরে পিসির বাড়ি পৌঁছনো। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছয় কালনা খেয়াঘাটে। সেখানে এক ব্যক্তির কাছ থেকে দু’টাকা চেয়ে খেয়া পেরিয়ে পৌঁছয় নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাটে। সেখান থেকে হেঁটে শান্তিপুর পৌঁছয়। পুলিশ জানায়, ওই দিন শান্তিপুরে একটি আদিবাসী সম্মেলন চলছিল। সেখানে হাজির হয় প্রাণগোবিন্দ। ওই সম্মেলনে গিয়েছিলেন রাউতারা গ্রামের মহাদেববাবু। পুলিশকে তিনি জানান, ওই বালক কোথা থেকে এসেছে বা কোথায় যেতে চায়, কিছুই ঠিক মতো বলতে পারছিল না। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে দেখে তিনি প্রাণগোবিন্দকে বাড়ি নিয়ে যান। মহাদেববাবুর দাবি, পরে ঠিকানা বলতে পারলে বালকটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। তবে তার আগেই পুলিশ ছেলেটির খোঁজে তার বাড়ি পৌঁছে যায়।
ভক্তবাবু বলেন, “নীলকান্তের পরিবার আমাদের সঙ্গেই থাকে। প্রাণগোবিন্দ নিখোঁজ হওয়ার পরে পুলিশে জানানোর পাশাপাশি আমরা মাইকে করে এলাকায় প্রচার করেছিলাম। মঙ্গলবার রাউতারার আশপাশের কয়েক জন বাসিন্দা আমাদের গ্রামে শুয়োর বিক্রি করতে আসেন। তাঁরাই জানান, ওই রকম দেখতে একটি ছেলেকে তাঁরা নিজেদের এলাকায় দেখেছেন। এর পরেই পুলিশকে খবর দিয়ে রাউতারা রওনা হই আমরা।”
পুলিশ উদ্ধার করে আনার পরে এ দিন বিকেলে থানায় মাথা নিচু করে বসেছিল প্রাণগোবিন্দ। বাড়ি থেকে কেন পালাল, তা জানতে চাওয়া হলে সে বলে, “আগের রাতে পড়া তৈরি করতে পারিনি। বকাবকির ভয়ে পিসির বাড়ি পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তা হারিয়ে ফেলি।” ছেলেকে ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নীলকান্তবাবু। তিনি বলেন, “পড়াশোনা না করলে ছেলেদের মাঝে-মধ্যে ধমক দিই ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে এমন কাণ্ড ঘটাবে ভাবিনি। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.