টাকা দিলেই ফেরত পাওয়া যাবে ছেলেকে। সংবাদপত্রে নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে দুর্গাপুরের বাসিন্দা কিশোরী সাউকে ফোন করে এ কথাই জানিয়েছিলেন বরাহনগরের এক মহিলা। কিন্তু টাকা দিতে এসে দেখা গেল, গোটা বিষয়টিই ভুয়ো। স্রেফ টাকা হাতানোর জন্যই এ কথা বলেছিলেন ওই মহিলা।
জালিয়াতির অভিযোগে কুঠিঘাট এলাকার বাসিন্দা সংযুক্তা গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই মহিলা ও তাঁর এক বন্ধু দীপক মাইতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাঁদের দুর্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, দুর্গাপুরের বেনাচিতি মোড় এলাকার বাসিন্দা পেশায় খাবার বিক্রেতা কিশোরী সাউয়ের ছোট ছেলে আনন্দ (১৩) মূক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। গত ২৭ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরোয় সে। তার পরে আর খোঁজ মেলেনি। ২৮ এপ্রিল স্থানীয় অরবিন্দ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে আনন্দের পরিবার। অনেক দিন হয়ে গেলেও খোঁজ না পেয়ে সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন দেন তাঁরা। তাঁর দাদা রাজু বলেন, “বিজ্ঞাপনে আমার দু’টি ফোন নম্বরই দেওয়া ছিল। খোঁজ দিলে দশ হাজার টাকা পুরস্কারের কথাও বলা হয়।”
কিশোরীবাবুরা পুলিশকে জানান, বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিন পরেই সংযুক্তা তাঁদের ফোনে জানান, আনন্দ তাঁর কাছে আছে। ফেরত পেতে হলে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু রাজি হননি তাঁরা। রাজু বলেন, “কয়েক দিন পরে ফের ওই মহিলা ফোন করে জানান, আপাতত দশ হাজার টাকা নিয়ে শিয়ালদহে চলে আসতে।” কিন্তু ওই মহিলা শিয়ালদহের যে ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলেছিলেন, তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলেই দাবি রাজুদের।
রাজু আরও জানান, এর পর থেকে ওই মহিলার মোবাইল বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গত শনিবার সংযুক্তা নিজেই রাজুদের ফোন করে জানান, টাকা নিয়ে দমদম স্টেশনে দেখা করতে। পুলিশ জানায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় দমদম স্টেশনে রাজুদের সঙ্গে দেখা করে সংযুক্তা টাকা দাবি করেন। কিন্তু ছেলেকে হাতে না পেলে তাঁরা টাকা দিতে রাজি হন না। এর পরে তাঁদের সিঁথির মোড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন ওই মহিলা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাত দশটা নাগাদ ফোন করে রাজুদের বরাহনগর কুঠিঘাট এলাকায় আসতে বলেন তিনি। তবে তখনও আগে টাকা চান সংযুক্তা। এ বার সন্দেহ হওয়ায় রাজুরা স্থানীয় যুবকদের বিষয়টি জানান। তাঁরাই রাজুদের সংযুক্তার বাড়িতে নিয়ে যান। দেখা যায়, আনন্দের কোনও খবরই জানেন না ওই মহিলা। ওই রাতেই বরাহনগর থানার পুলিশের হাতে দু’জনকে তুলে দেন স্থানীয়েরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত মহিলা ছেলের সন্ধান দেওয়ার নামে পুলিশকেও বরাহনগরের নানা জায়গায় ঘোরায়। |