তাড়াহুড়োর ঠেলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল আসল উদ্দেশ্যটাই। আর তারই জেরে এখন নিত্য খেসারত দিয়ে চলেছেন কয়েকশো রোগী। আকছার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। অসহ্য গরমে ছটফট করছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আউটডোরের টিকিট বন্ধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, পানীয় জলটুকুও মিলছে না। শুধু রোগী নয়, চিকিৎসক-নার্সদেরও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঘটনাস্থল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ব্লক।
দেড় বছর আগে ঘটা করে এই আউটডোর ব্লক চালু হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ এখন মানছেন, সেই সময়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেশ কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে, যা এখন মেরামত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, কৃতিত্বের তালিকা দীর্ঘ করতে তখন এতটাই তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল যে, পরিকল্পনাটাই ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়নি। দেখা হয়নি, চারতলা একটা ঝাঁ-চকচকে বাড়ি তৈরি হলেও সেখানে সমস্ত বিভাগের আউটডোর চালাতে গেলে যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন, তা বহন করার ব্যবস্থাটাই নেই। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ পুরোদমে চলতে শুরু করলে এই বিভাগ আঁধার হয়ে যায়।
রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও দীর্ঘক্ষণ নিষ্প্রদীপ ছিল। বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও। অসহ্য গরমে জেরবার হয়েছিলেন রোগীরা। কলকাতা মেডিক্যালের আউটডোরে এই সমস্যা এখন কার্যত নিত্যদিনের।
কেন পরিকল্পনা খতিয়ে দেখা হয়নি? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় চাপিয়েছেন একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার উপরে। তাঁদের বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা’র টাকায় ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার উপরেই মেডিক্যালের নতুন ভবন তৈরির দায়িত্ব ছিল। তারা কাজ করার পরে সেই কাজের নকশাই জমা দেয়নি। ফলে কোথায়, কত বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেই হিসেব বোঝা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সংস্থার অবশ্য দাবি, উদ্বোধনের পরে প্রথম এক বছর যখন তারা এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল, তখন কোনও সমস্যা হয়নি। এখন স্থানীয় স্তরে পূর্ত দফতরের কর্মীরা কাজ সামলাতে পারছেন না, তাই এই বিপত্তি।
প্রশ্ন হল, এত বড় একটি হাসপাতালে কোনও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে যখন হস্তান্তর হচ্ছে, তখনই কেন তা খতিয়ে দেখা হবে না? কেন জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হবে? রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রোগীরা কেন ভুগবেন? হাসপাতালের তরফে এই সমস্যার কথা আমাকে জানানোই হয়নি। জানালে আগেই সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা করতাম। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকবে। চুপ করে বসে থাকলে তো চলবে না।”
পরিস্থিতি যতটা জটিল, তাতে এখনই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, বিদ্যুতের একটি সাব-স্টেশন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা মিটবে না। কবে চালু হবে সাব-স্টেশন? তার নির্দিষ্ট কোনও উত্তর কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। মেডিক্যালের চিকিৎসক তথা হেল্থ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হীরালাল কোনার বলেন, “গোটা বাড়িটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা ছিল। তার জায়গায় এখন বহু সময় পাখাই চালানো যায় না। আরও সমস্যা হল, নকশার ত্রুটির কারণে হাওয়া চলাচলও ঠিক ভাবে হচ্ছে না। ফলে ভিতরে দমবন্ধ করা পরিবেশ। আমাদেরই কষ্ট হয়, রোগীদেরও প্রাণান্ত দশা।”
শুধু আউটডোর নয়, সমস্যা ঘটছে অন্যত্রও। সোমবার সকালে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিঘ্ন ঘটে একাধিক অস্ত্রোপচারে। পূর্ত দফতরের কর্মীরা গিয়ে ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। |