শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্টে ‘স্বস্তি’র হাওয়া ডুয়ার্সের বড় অংশ জুড়েই। মহাকরণ থেকে রিপোর্টের নির্যাস জানানোর পরেই শনিবার রাত থেকে নাগরাকাটা-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় তা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সদস্য সমর্থকেরাও। তরাই-ডুয়ার্সের ৩৯৮টি মৌজাকে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর অন্তর্ভুক্ত করতে মোর্চা দাবি তুলেছিল। তা নিয়ে ডুয়ার্সে অশান্তির যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্টে তা অনেকটাই ‘দূর’ হল এই স্বস্তিতে সাধারণ বাসিন্দা থেকে পরিষদের সদস্য সমর্থকেরা অনেক জায়গায় আবির উড়িয়ে উৎসবেও মেতে ওঠেন। আনন্দে মেতেছেন বীরপাড়া, বানারহাট, মাদারিহাট, গয়েরকাটার সাধারণ বাসিন্দাদের একাংশও। কয়েকটি জায়গায় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে মিছিল বের করা হয়। পটকা ফাটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ। রিপোর্ট প্রকাশের পরেই জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে ডুয়ার্স জুড়েই বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হয়েছে। বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করে বিভিন্ন সংগঠনগুলিকে সংযত থাকার বার্তাও দেওয়া হয়েছে। রবিবার মালবাজার মিউনিসিপ্যালটি হলে বিরসা মুণ্ডার মৃত্যু দিবস উপলক্ষ্যে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভা হয়। যোগ দেন পরিষদের সর্বভারতীয় সভাপতি সোমজি ভাই দামোর-সহ তরাই এবং ডুয়ার্সের অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকি বলেন, “শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্টে আমরা খুশি। মোর্চার দাবি যে যুক্তিযুক্ত ছিল না তা স্পষ্ট। মোর্চা দাবি নিয়ে এলাকার শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছিল। শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট বাসিন্দাদের স্বস্তি দেবে। মোর্চার প্রতিক্রিয়া যাই হোক এলাকায় শান্তি বজায় রেখে তারা যথাযথ ভাবে রাজ্য সরকারকে জানাক। আমাদের কিছু জানানোর থাকলে আমরাও জানাব। আন্দোলনের নামে মোর্চা ফের ডুয়ার্সকে আশান্ত করতে চাইলে আমারা মেনে নেব না।” তাঁদের দাবি, ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের সামসিং ও চিলৌনি মৌজা জিটিএ’র অর্ন্তভুক্তির সুপারিশে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই তাঁদের কাছে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সপ্তাহখানেক বাদে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির রিপোর্টে ডুয়ার্সের ২টি মৌজার অর্ন্তভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। ডুয়ার্সের বিভিন্ন মৌজাকে জিটিএ’র অন্তর্ভুক্তির জন্য মোর্চার দাবির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন সংগঠন। তা নিয়ে চাপান উতোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এলাকার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের কাছেও। বিভিন্ন এলাকায় গোলমালের ঘটনাও ঘটে। যা মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে পুলিশ প্রশাসনের কাছেও। মোর্চার দাবি খতিয়ে দেখতে গঠিত হয় শ্যামল সেনের নেতৃত্ব উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি। কমিটির রিপোর্ট মেনে নেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং মোর্চা উভয়পক্ষই সহমত পোষণ করে চুক্তি করে। এখন রিপোর্টের বিরুদ্ধে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে ডুয়ার্সে মোর্চার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে। মোর্চার বিরোধিতায় নামা ডুয়ার্সের বিভিন্ন সংগঠনগুলি উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখার দাবি তুলেছেন। ডুয়ার্স নাগরিক মঞ্চের মুখপাত্র ল্যারি বসু বলেন, “জিটিএ-তে ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আশঙ্কার মেঘ কেটে গিয়েছে। এখন প্রয়োজন শান্তি বজায় রাখা এবং উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের সামিল করে হ্যামিল্টনগঞ্জে কনভেনশন করা হবে। মোর্চাকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।” স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সরাসরি অবশ্য কিছু বলতে চাইছেন না। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “আমাদের বিধায়ককে বাদ দিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। তাই রিপোর্টের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।” সিপিএম-এর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সুনীল বনিকরা জানান, সব কিছুর শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হোক এটাই তাঁরা চাইছেন। কালচিনি ব্লকের মোর্চা সমর্থিত নির্দল বিধায়ক উইলসন চম্পামারি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি জানান, রিপোর্টে মোর্চা নেতৃত্ব খুশি নন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিরসা তিরকির বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা জন বার্লারাও রিপোর্ট মেনে নিতে পারছেন না। তবে পরিষদের চা বাগান শ্রমিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়োস হাসাপূর্তি এবং বড়ো পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রুদ্র মন্ডলরা আলাদা ভাবে জানান, তরাই-ডুয়ার্সের পাঁচটি মৌজা জিটিএ’র অন্তর্ভুক্তির সুপারিশের বিরুদ্ধে তাঁরা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন। |